কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কিশোরগঞ্জে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা

0

সামসুজ্জামান সুমন ,কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের জমজমাট প্রচারণা জমে উঠেছে উপজেলার সকল ইউনিয়নে। পোষ্টারে ছেয়ে গেছে গোটা উপজেলা।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চা দোকান গুলোতে নির্বাচনী প্রতীক পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরণের জল্পনা কল্পনা। বাক-বিতন্ডার অভাব নেই সমর্থক ও কর্মীদের মাঝে। চায়ের কাপে প্রচন্ড চাপ আর নির্বাচনী গল্পে ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের দিন। দিন ঘনিয়ে আসার পাশাপাশি প্রচারণাও জমেছে নির্বাচনী এলাকায়। উপজেলার বাজার গুলোর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাস্তার উপরে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রার্থীর পোষ্টার। দর্শনীয় স্থানে রশিতে সুন্দর ভাবে সাটানো হয়েছে পোষ্টার গুলো। রিক্সা ও অটোশ্রমিকদের গায়ে পছন্দের প্রার্থীদের টি শার্ট নজর কেড়েছে ভোটারদের। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসাবে রিক্সা ও অটোগাড়ীতে প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত পতাকা শোভা পাচ্ছে। গ্রামের ক্ষেতে খামারে কাজ করা মানুষ গুলোর সাথে মিশে গিয়ে একাকার হয়ে ভোট প্রার্থনা করছে প্রার্থীরা। অনেক প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের মন কেড়ে নিতে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের চকলেট দিয়ে কোলে তুলে আদর করছেন।
স্থানীয় জে এইচ প্রেসে ছাপানোর কাজ ও কর্মচারীদের ব্যস্ততা দেখে মনে হয় আগামীকাল ভোটের দিন। সামান্য সময়ও প্রেসের কর্মচারীরা অবসর নিতে পারছে না। চায়ের দোকান গুলো পার্কের মত রূপ নিয়েছে। কে হচ্ছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।

কে করবে উপজেলার উন্নয়ন? এমন প্রশ্নে নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে ভোটারদের মধ্যে সময় চলে যাচ্ছে ভোটের দিকে। পছন্দের প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে আনতে মাঠে ময়দানে কাজ করছেন প্রার্থীর কর্মীরা। রং মাখিয়ে ছন্দ ও তালে তালে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় গোটা উপজেলার ভোটারদের মন জয় করছে প্রার্থীরা।
“আর মাত্র কয়েকদিন চিন্তা করে রায় দিন, দেখতে দেখতে যাচ্ছে দিন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন,ওমরা সবাই দেউলিয়া ভোটটা নিবে কাউলিয়া,কিশোরগঞ্জের রাস্তা ভাঙ্গা অমূক ভাইয়ে করবে চাঙ্গা ” এমন করে ছন্দে ছন্দে মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছে প্রার্থীর প্রচারম্যানরা।
এবারে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১লাখ ৮২ হাজার ৯১৬ জন ভোটারের বিপরীতে চেয়ারম্যান পদে ৬জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পুরুষ ভোটারের চেয়ে মহিলা ভোটার ৫৭৪জন বেশী বলে প্রার্থীরা মহিলা ভোটারদের টার্গেট করেছে বেশী। মোট পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৯১হাজার ১শ’৭১জন এবং মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৯১ হাজার ৭শ’৪৫জন। আগামী ১০মার্চ ভোট গ্রহন অনুুষ্ঠিত হবে। চেয়ারম্যান পদে ৬জন প্রতিদ্বন্দিতা করায় এ পদে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। নৌকা, লাঙ্গল, ঘোড়া আনারস,দোয়াত কলম ও মোটর সাইকেল প্রতীকের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ২১জন প্রার্থীর প্রচার মাইক এক সাথে কিশোরগঞ্জ শহরে পৌছিলে বাজারের দোকানদার ও সাধারণ ভোটাররাও অতিষ্ট হয়ে উঠে। আবার এক সাথে সকল প্রার্থীর মাইকিং শোনার পর ভোটাররাও আনন্দ ও হৈ হুল্লোর করে মিছিল করে। উপজেলা প্রশাসন কঠোর থাকার কারণে আচরণ বিধি মেনে প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীরাও নিজের বিজয় ছিনিয়ে নিতে ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। অনেক প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন বিয়ে,ওয়াজ মাহফিল ও গরীব অসহায় শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে পড়া লেখার খরচ। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে ভোটারদের মন জয় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে,উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন জাকির হোসেন বাবুল,লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে রশিদুল ইসলাম,আনারস প্রতীক নিয়ে শাহ্ মোঃ আবুল কালাম বারী পাইলট,দোয়াত কলম নিয়ে আ ন ম রুহুল ইসলাম,ঘোড়া প্রতীক নিয়ে রশিদুল ইসলাম রশিদ ও বিপ্লব কুমার সরকার মোটর সাইকেল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে উড়োজাহাজ প্রতীকে বরকত ই-খোদা মুকুল,টিয়া পাখি প্রতীকে রবিউল ইসলাম বাবু,তালা প্রতীকে ইদ্রিস আলী,টিউবওয়েল প্রতীকে বাদশাহ আলমগীর, বৈদ্যুতিক বাল্ব প্রতীকে হাফিজুল ইসলাম,চশমা প্রতীকে ভূবণ চন্দ্র মোহন্ত ও মাইক প্রতীকে স্বপন চন্দ্র ও বই প্রতীকে রহিদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দিতা করছেন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুলের টব প্রতীকে শিল্পী রানী রায়, ফুটবল প্রতীকে বেগম লাইলী কাদের, সেলাই মেশিন প্রতীকে মোকলেজা বেগম,লাঙ্গল প্রতীকে রোকসানা পারভীন,পদ্মফূল প্রতীকে শাপলা বেগম ও কলস প্রতীকে শিরিনা বেগম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০ ফেব্রুয়ারী প্রতীক বরাদ্দের পর নির্ঘুম দিন রাত পরিশ্রম করে স্বল্প সময় নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।
উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের ভোটার বেলী বেগম ও জাহিদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,জাকির হোসেন বাবুল চেয়ারম্যান হওয়ার পর আমাকে মাটি কাটার তালিকায় নাম দেয়ার জন্য ৫হাজার টাকা নিয়েছিল। তিন বছর পরেও আমার নামটা দেয়নি। আবার টাকাও ফেরত দিয়েছে অনেক দেরী। তাকে এবার ভোট দিলে হামার কোন লাভ হবে না। হামার গরীবের পাশে কেউ দ্যাখেনা। এবার হামরা গরীবের প্রার্থী রশিদক ঘোড়া মার্কাত ভোট দেমো। যায় চেয়ারম্যান না হয়াও হামার জুম্মা মাদ্রাসায় দান কছছে। তার কাছত হামরা অনেক কিছু পাছি।
সদর ইউনিয়নের মুশা গ্রামের ভোটার তোফাজ্জল হোসেন মাষ্টারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,হামরা এলাকার উন্নয়নে এবং দলের স্বার্থে আবার ঐক্যবদ্ধ ভাবে জাকির হোসেন বাবুলকে ভোট দিব। আমরা জাকির হোসেন বাবুলের সকল অন্যায় অপরাধ ভুলে গেছি। তাকে চেয়ারম্যান করলে কমপক্ষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের গাড়ীটা তো রাস্তা দিয়ে যাওয়া দেখতে পাব এটাই ভাল। এজন্য মুশার সবাই নৌকায় ভোট দিবে। রশিদুল ইসলাম চেয়ারম্যান থাকার পর কিশোরগঞ্জে কোন উন্নয়ন হয়নি। আবার বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি এলাকার দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন,কিশোরগঞ্জে রশিদুল ইসলাম চেয়ারম্যানের আমলে কিশোরগঞ্জ উপজেলা ভিক্ষুকমুক্ত হয়েছে,মাদকমুক্ত ও বাল্য বিবাহ মুক্ত হয়েছে। সরকারের সহযোগীতায় এবং রশিদুল ইসলামের প্রচেষ্টায় কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে শত ভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। এজন্য আবারও এই উপজেলার মানুষ রশিদুল ইসলামকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান করবেই।
নিতাই ইউনিয়নের তরুন ভোটার রোকসানা আক্তার ও মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তারা বলেন,আমরা মনে করি এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে পাইলটকে আনারস মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারলে সকল অন্যায় উপজেলা থেকে মুছে যাবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করবে।
মাগুড়া ইউনিয়নের ভোটার জুয়েল হোসেন বলেন,এই উপজেলায় কোন ক্ষমতা ছাড়াই যে মানুষটা গরীব মানুষের মেয়ের বিয়েতে নিঃস্বার্থ ভাবে টাকা পয়সা দিয়ে সহযোগীতা করেছেন সে মানুষটাকে ক্ষমতায় বসাতে পারলে তিনি অবশ্যই উপজেলার উন্নয়নে কাজ করবে। তিনি ঠিকাদার হয়ে যে পরিমান কিশোরগঞ্জের উন্নয়ন করেছেন তাতে অনেকেই ক্ষমতায় থাকার পরও এমন মানুষের উপকার করতে পারে নাই। ঠিকাদার রশিদুল ইসলাম রশিদ (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া মার্কা নিয়ে উপজেলার ৭৮টি ভোট কেন্দ্রের বেশীর ভাগ কেন্দ্রেই বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকবে এবং চেয়ারম্যান হবেই ইনশাআল্লাহ।
তবে অপর দিকে আওয়ামী যুবলীগের উপজেলা আহবায়ক (স্বতন্ত্রপ্রার্থী) শাহ মোঃ আবুল কালাম বারী পাইলট তরুন ও নতুন ভোটারদেরকেই সাথে নিয়ে মাঠ দখলে রেখেছেন ঘোড়া প্রতীক নিয়ে। নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তিনি ভোটারদের প্রতি আহবান জানান। তিনি ভোটারদেরকে উপজেলার উন্নয়নের স্বার্থে এবং সরকারের অবকাঠামো উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে টিকে রাখার জন্য সকল ভোটারদেরকে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহবান জানান।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোটারদের মুখোমুখী হয়ে জানা গেছে,উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বাবুল ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে কিশোরগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং সেখান থেকে শত শত মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। তার দায়িত্বপালন চলাকালে কিশোরগঞ্জ উপজেলার মানুষ স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উপজেলার সর্বস্তরের মানুষের বিপদে আপদে নিরলসভাবে কাজ করেছেন তিনি। এজন্য এলাকায় তার পক্ষে নৌকা প্রতীকে আবারও নিশ্চিত বিজয়ের জন্য নেতাকর্মীরা মাঠে ময়দানে কাজ করছেন।
উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলাম ২০১৪ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলাকে শতভাগ ভিক্ষুকমুক্ত,বাল্যবিবাহ মুক্ত,শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা ও মাদকমুক্ত উপজেলা গড়তে বিশেষ ভূমিকা পালন করায় পূনরায় তাকে নির্বাচিত করতে দৃঢ়ভাবে মাঠে ময়দানে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
অপর দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের চেয়ে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মাঠে ময়দানে। পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে গত নির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম বাবু টিয়া পাখি প্রতীক নিয়ে পরাজিত হওয়ায় এ নির্বাচনে জয়লাভের আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারী যাচাই বাছাইয়ে অসম্পূর্ণ কাগজ থাকায় জেলা নিটার্নিং অফিসে তার নির্বাচনী প্রার্থীতা বাতিল করা হলে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেন। উচ্চ আদালত তাকে ২০ ফেব্রুয়ারী প্রার্থীতা ফিরে দিয়ে প্রতীক বরাদ্দের জন্য আদেশ দেন। পরে তিনি নির্বাচনের মাঠে জয়ের ব্যাপারে মরিয়া হয়ে উঠেন। ৮জন পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে এ পদে লড়াই হবে ত্রিমুখী। রবিউল ইসলাম (টিয়া পাখি).মাওলানা ইদ্রিস আলী (তালা) ও বরকত-ই খোদা মুকুল উড়োজাহাজের মধ্যে।
মাওলানা ইদ্রিস আলীর দাবী ইসলাম প্রিয় মানুষ গুলো যদি আমাকে তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করেন এবং মসজিদ,মাদ্রাসা,ইয়াতিমখানা ও অন্যান্য বিষয়ে উন্নয়নের জন্য আমাকে যোগ্য মনে করে নির্বাচিত করলে আমি তাদের আমানতের রক্ষা করবো ইনশাআল্লাহ। আমি ৯ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছি মানুষ আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে ।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহঃসভাপতি বরকই-ই খোদা মুকুলের ভাষ্য মতে তার পক্ষে দলের নেতা কর্মীরা যে ভাবে নিরলস ভাবে কাজ করছেন এবং প্রতিটি ইউনিয়নে যে পরিমান মানুষ তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন ও তারজন্য ভোট প্রার্থনা করছেন তাতে তার বিজয় অবশ্যই আল্লাহ দিবেন। অন্যান্য প্রার্থীদের প্রচারণা এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে দেখা যায়নি।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জন প্রার্থী ৬জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলতঃ এ পদেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ফুলের টব,ফুটবল ও পদ্মফুল প্রতীকের মধ্যে। এ পদের জন্য কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভোটার বিশেষ ভাবে সচেতন আছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোছাঃ শিরিনা বেগমকে (কলস প্রতীকে) বিপুল ভোটে বিজয়ী করলেও তিনি এই উপজেলার মানুষের তেমন উপকারে আসেনি। ৫বছর তার দায়িত্ব পালনে উপজেলার কোন মিটিংয়ে,সভা সমাবেশে তার মুখমিশ্রিত একটা উন্নয়নের বাক্য শুনতে পায়নি। এবারেও তিনি নির্বাচনের এ যুদ্ধে কলস প্রতীক নিয়ে গতবারের জন্য ক্ষমা চেয়ে এবার ভোট প্রার্থনা করলেও জনগণ তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। চাঁদখানা ইউনিয়নের হালিমা বেগম,নিতাই ইউনিয়নের শম্পা আক্তার,কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের হৃদয় মোহন্ত বলেন,তাকে গত বছর ভোট দিয়ে তার ছায়াটুকুও দেখিনি। আবার বসন্তের কোকিল হয়ে আমাদের মাঝে ভোট চাইছেন।
তবে উপজেলার ভোটারদের আশা আকাঙ্খার ফসল হিসাবে শিক্ষিত ষ্মার্ট ও সুদর্শন প্রার্থী হিসেবে শিল্পী রানী রায়কে (ফুলের টব) প্রতীকে ভোট দেয়ার কথা ভাবছেন উপজেলার অনেক ভোটাররা। ভোটারদের ভাষ্যমতে জানা গেছে,শিল্পী রানী রায় প্রত্যেক ভোটারের সাথে দেখা করে দোয়া নিচ্ছেন এবং বয়স্ক ভোটারদের কাছ থেকে মাথায় হাত দিয়ে দোয়া ও আশির্বাদ গ্রহন করে ভোট প্রার্থনা করছেন। মিষ্টি ভাষায় ভোটারদেরকে ভাই,দাদা,চাচা,চাচী বলে ভোট প্রার্থনা করছেন। বাড়ী থেকে সবুজের মাঠে রয়েছে তার বিস্তৃতি। দিনের বেলায় ভোটারদের বাড়ীতেই চেয়ে নিয়ে খাচ্ছেন পানি ও খাবার। খুব সহজেই আপন করে নিচ্ছেন ভোটারদের। নতুন ভোটারদের সাথে মাঝে মাঝে ছবি তুলে রাখছেন নিজের মোবাইলে। তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের কারিমা আক্তার বলেন,আমি নতুন ভোটার হিসেবে একজন শিক্ষিত প্রার্থীকে আমার ভোট দিব। যে মহিলাদের জন্য ও মেয়েদের জন্য উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর থেকে আমাদের অধিকারকে ছিনিয়ে আনবে। আর মতে শিল্পী রানী রায় এ পদের জন্য অবশ্যই যোগ্য।
সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেত্রী বেগম লাইলী কাদেরও কোনদিক থেকে নেই পিছিয়ে। দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনেক দৌড়ঝাপ করেছেন। কিন্তু পরে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাইস চেয়ারম্যান পদটি উন্মুক্ত রাখায় তিনি ফুটবল প্রতীক নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। একদিকে দলীয় ভোটারদের ভোট তো তার পক্ষেই আছে আবার অপরদিকে চাঁদখানা ইউনিয়নে তার বাবার বাড়ী হওয়ায় নাড়ীর টান তার দিকেই উঁকি দিয়েছে। তারপক্ষে ৯ ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্য ও মহিলা সদস্যরা কাজ করছেন। কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক মহিলা সদস্য কহিনুর বেগম বলেন, বেগম লাইলী কাদেরসহ দীর্ঘদিন একসাথে পরিষদে ছিলাম। তিনি প্রতিটি মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করে কথা বলেন। তার কাছে কখনও কোন মানুষ কষ্ট পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের কোন অনুদান তার পেটে তিনি ঢুকায়নি। যখন যা পেয়েছে তখন মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি বেগম লাইলী কাদের (ফুটবল মাকায়) বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে।
শাপলা বেগম (পদ্মফূল) প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তার স্বামী মিঠু মিয়া গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের একজন সফল সদস্য ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদে থাকাকালে টিআর,কাবিখা,ভিজিএফ বিতরণে যার ভূমিকা ছিল এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। পরিষদের কেউ গরীবের মালামাল আত্মসাৎ করার চেষ্টা করলে তিনি উপজেলা প্রশাসনকে প্রমাণসহ সহযোগীতা করতেন। তার এ অবদানের কথা গোটা উপজেলার মানুষ ভাল করেই জানে। তার স্ত্রী শাপলা বেগমকেও তিনি এমন ভাবে গড়ে তুলেছেন মানব সেবায়। তার বাড়ীতে কোন মানুষ আসলে তাকে তিনি মনের মাধুরী মিশিয়ে মিষ্টি ভাষায় তাদের আবেদন চাওয়া পাওয়া গুলো শুনে তাকে একটা পান খাইয়ে বিদায় করেছেন। সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা আক্তারের সকল কালিমাকে লেপন করতে এবং একজন মহিলা সদস্য হিসাবে পরিষদে কি কাজ তা জনগণকে জানাতে চায় মিঠু মিয়ার স্ত্রী শাপলা বেগম। স্বামীর সততাকে কাজে লাগিয়ে গোটা উপজেলায় ভোট প্রার্থনা করছেন এই প্রার্থী। ভোটের কাজে সাথে রেখেছেন তার স্বামীকে। ভোটারদের কাছে গিয়ে মহিলাদের কাছে প্রার্থী নিজেই ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছেন। আর পুরুষ ভোটারদের সাথে ভোট ভিক্ষা চাইছেন প্রার্থীর স্বামী মিঠু মিয়া। মিঠু মিয়া বলেন,আমার একমাত্র শক্তি কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ জনগণ। তাদের ইচ্ছা হলে আমাকে নির্বাচিত করবে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ ১০মার্চের নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদ্মফুল প্রতীকে ভোট দিয়ে শাপলা বেগমকে বিজয় করবে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন,নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ্যর ব্যাপারে প্রশাসনের যথেষ্ট নজরদারী থাকবে। কেউ অনিয়ম করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ মনোয়ার হোসেন বলেন,নির্বাচন আচরণ বিধির উপরে নজরদারী করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। কেউ অনিয়ম করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave A Reply