- সিউর সাকসেস স্কুল এন্ড ক্যাডেট কোচিং এর অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত - October 19, 2024
- A large public meeting was held at Dhanbari on the initiative of BNPMd. - October 19, 2024
- BNP initiative in Dhanbari to pray for the souls of those martyred in the mass uprising - October 19, 2024
মে-রাত্তিরে ভীমতালের টুরিস্ট বাংলো থেকে এক আকাশ তারার নীচে জ্বলজ্বলে টলটলে ভীমতালকে দেখে এই গল্পকেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে জাগে। একা ভীমতালের আর দোষ কী! উত্তরাখণ্ডের আকাশ-বাতাস, পাহাড়-নদীর গায়ে এমন মায়াচুম্বক, ইতিহাস আর মিথ দুই-ই সমান টানে। ভীমতালে এসে উঠেছি, তা বলে কি দুপুরের মিঠে রোদে নৈনিতালের সোনা সোনা আকাশ দেখে মনে মনে বলিনি, কেন এই মুহূর্তগুলো চলে যাবে, কেন এদের ধরে রাখতে পারবনা জীবনে? কেন?
পাহাড়ি পথে আলমোড়া। ‘এই মাটিতে রইল তাহার বিস্মিত প্রণাম,’ আলমোড়ায় লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বিবেকানন্দ, নিবেদিতার আলমোড়া। পাহাড়ের গায়ে পা-পা নেমে যাওয়া রামকৃষ্ণ মিশন।পাহাড়ি সারল্য আর সাহেবি আভিজাত্য হাত ধরাধরি করে হাঁটে এই শৈলশহরে। ভিউপয়েন্টের নাম ‘ব্রাইট এন্ড কর্নার’ কেন, মর্মোদ্ধার হয় এখান থেকে নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লি, নন্দকোট, চৌখাম্বা দেখতে পেলে। দেখেছি কৌশানী থেকেও, তাতে কী! একই জিনিস নবনব রূপে দেখায় উত্তরাখণ্ডের নিসর্গ।সম্মোহনের কাজল পরিয়ে নেয় দু’চোখে।
তা-ই যদি বা না হবে, তবে রানিখেতের মতো ক্যান্টনমেন্ট টাউনের রাস্তায় কুমায়ুন আর নাগা রেজিমেন্টের সেনাদেরও এমন অ-সেনাসুলভ, রোম্যান্টিক গোছের লাগে কেন? পাথুরে মুখ চোখেও ছায়া ফেলে যায় উত্তরাখণ্ডের বর্ষার মেঘ। বর্ষা দেখেছি মেঘালয়েও, কিন্তু উত্তরাখণ্ডে এসে বোঝা গেল, এ-ও কম আপন ঘর নয় মেঘেদের। মুসৌরির রিমঝিম রাত ভোর হতে পারে শ্রাবণী মেঘের কনসার্ট শুনে, জুলাইয়ের ক্যানভাসে কৃষ্ণকলি মেঘেদের আঁকিবুকি দেখেই কেটে যেতে পারে ধনৌলটির কোনও বিবশ বিকেল। বিশ্বাস না হলে মুসৌরি-লাগোয়া ল্যান্ডর-এর বাসিন্দারা স্কিনবন্ডকে জিজ্ঞেস করে দেখুন! ওঁর বইয়ের প্রতিটি পাতাই উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক পাণ্ডুলিপি।ভ্রামণিকেরও রকম ফের আছে। কেউ স্রেফ রোজকার রুটিন থেকে পালিয়ে দু’দণ্ড জিরোতে বেরিয়ে পড়েন। কাউকে টানে ট্রেকিং-পথ আর তুষারশৃঙ্গ, না এসে পারেননা। কারও আকর্ষণ এখানকার মন্দির আর তীর্থক্ষেত্র। যে যা-ই চান, উত্তরাখণ্ড কল্পতরু। ফি বছর হরিদ্বার- হৃষীকেশ- দেহরাদূন- কেদারনাথ- বদ্রিনাথসহ চারধাম যাত্রায় যান লক্ষ লক্ষ মানুষ। পাহাড়-প্রেমিক সময় পেলেই বেরিয়ে পড়েন নৈনিতাল-রানিখেত- আলমোড়া- চৌখরি- কৌশানী ঘুরতে। রূপকুণ্ড, সতোপন্থ, নাগটিব্বা, গোমুখতপোবন, হরকিদুন, চোপতা-সহ রাশিরাশি ট্রেকিং-গন্তব্যের ডালা নিয়ে বসে আছে এই রাজ্য। এমন মানুষকেও চিনি, যিনি প্রতি বছর সপরিবার উত্তরাখণ্ড আসেন; তাঁর মা-বাবা হরিদ্বার-হৃষীকেশ পেয়ে খুশি, ছোটরা পাহাড় নদী পাইন বন পেয়ে, আর তিনি নিজে ট্রেকিংয়ে!
বেড়াতে গিয়ে রাত্রিবাসের স্থান হিসেবে অনেকেই বেছে নিই একটু সর গরম জায়গাগুলোকে, কারণ মনের পুকুরে নিরাপত্তা, জরুরি পরিষেবার মতো ব্যাপারগুলো ঘা মারতে থাকে। অনেক চোখ-জুড়োনো জায়গাই তাই দিনে দিনে দেখে বেরিয়ে যাই। খেয়াল করে দেখবেন, সেই জায়গাগুলো দেখেই বেশি আক্ষেপ হয়, কেন থাকলাম না এখানে একটা রাত! বিনসারের অরণ্য পথে হাঁটতে হাঁটতে এই হা-হুতাশ পেয়ে বসেছিল আমাকেও। বনের মধ্যে হঠাৎ দেখা বিন্ধ্যেশ্বর মহাদেবের মন্দির, একটা বাঁকে গাড়ি থামিয়ে শুধু চারপাশের জঙ্গুলে গন্ধ আর পাখি-পতঙ্গের ডাক সমগ্র অস্তিত্বে মিশিয়ে নেওয়া— উত্তরাখণ্ড পাল্টে দেবে আপনাকে। গোমতীর তীরে ভারত সরকারের ‘মনুমেন্টস অব ন্যাশনাল ইম্পর্ট্যান্স’ তালিকাভুক্ত, নবম-দ্বাদশ শতকের বৈজনাথ বা বৈদ্যনাথ মন্দির দেখে স্তব্ধ হতে হয়, ইতিহাসও আধ্যাত্মিকতাকে মন সমান্তরাল আর অঙ্গাঙ্গি চলেছে এই ভারতবর্ষে! কৌশানীর ‘গাঁধী অনাসক্তি আশ্রম’ দেখে মনে হয়, কেন এমন সহজভাবে গোছাতে পারিনা জীবনটাকে, কেন শুধু বাহুল্য দিয়েই সাজাই!
হিমালয় নিয়ে বলা হল না কিছুই। বা, হিমালয় নিয়ে যতই বলি, শেষ কি হয়? উত্তরাখণ্ড জুড়ে আছে কুমায়ুন আর গঢ়বাল হিমালয়ের উদার বিস্তৃতবক্ষপট; অলকানন্দা ভাগীরথী মন্দাকিনী গঙ্গা গোমতী পিন্ডার যমুনায় ভেজা পাথর-মাটি। একদিন সেই সক্কালবেলায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে, গোটা কুমায়ুন পেরিয়ে হাজির হয়েছিলাম ল্যান্সডাউনে। গঢ়বালের ছোট্ট সেই জনপদে তখন সন্ধে নামছে।পথে একটু বাদে বাদে আর্মি চেকপোস্ট, পাশ দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় দেখি স্যালুট ঠুকছেন জওয়ানরা। টুরিস্ট বাংলোয় পৌঁছে আরও অবাক।সাহেবি আমলের বিশাল সুগম্ভীর বাংলো দাঁড়িয়ে আছে। এমন আভিজাত্যকেই বুঝি ইংরেজিতে ‘ম্যাজেস্টি’ বলে!
আধ্যাত্মিকতা থেকে অ্যাডভেঞ্চার, উত্তরাখণ্ডে পুরোটাই প্রাপ্তিযোগ। শৈবতীর্থ আর শক্তিপীঠগুলো দেখতে পারেন বছরভর।দুয়ারে বর্ষা বলে ভ্রমণে ভরসা হারাবেন না। মুসৌরি, ধনৌলটি, কৌশানী, মুন্সিয়ারি, ভ্যালি অব ফ্লাওয়ার্সের মতো জায়গা ঘুরতে পারেন বৃষ্টি- ঋতুতেও।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.