যেভাবে ইমামের গলা কাটেন ইমাম

0
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ে একটি মসজিদের ইমাম দিদারুল ইসলামকে যেভাবে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকরোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের বন্ধু ইমাম অহিদুর জামান।

বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালতে এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এতে পুুরো ঘটনার বিবরণ দেন আসামি।

জেলা পুলিশ ও আদালত সূত্র জানিয়েছে, নিহত ও আসামি দুজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুজনই দুটি মসজিদের ইমাম। সেই ইমাম বন্ধুই আরেক বন্ধুকে পাওনা টাকার জের ধরে গলাকেটে হত্যা করে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়ের টিপুরদি মল্লিকপাড়া এলাকার একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন নিহত ব্যক্তি। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন জানান, গত ২১ আগস্ট রাত ৯টায় সোনারগাঁও থানাধীন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন মল্লিকেরপাড়ার বাইতুল জালাল জামে মসজিদের পেশ ঈমাম দিদারুল ইসলাম মসজিদে এশার নামাজের জামাতের পর নিজ কক্ষে অবস্থান করেন। পরের দিন প্রতিদিনের মতো ভোর রাতে স্থানীয় মুসল্লিরা ফজরের আজান শুনতে না পেয়ে মসজিদের হজুরের কক্ষে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে টর্চের আলোতে মুসল্লিরা দেখেন যে, কাঠের চৌকির উপর রক্তাক্ত অবস্থায় ঈমাম দিদারুল ইসলামের দেহ উপর হয়ে পড়ে আছে এবং মাথা সহ মুখমন্ডল দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এবং ঘটনাস্থল হতে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। উক্ত ঘটনায় নিহত ঈমামের ভাই মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হিসেবে গ্রহণ করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে নির্দেশ প্রদান করেন মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের।

পুলিশ সুপারের নির্দেশ মোতাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ),  সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান, এসআই আবুল কালাম আজাদ সহ একাধিক টিম কাজ করে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের টিম অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মসজিদের ঈমাম দিদারুল ইসলাম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে।

এ ঘটনায় জড়িত অহিদুর জামানকে ২৮ আগস্ট বুধবার ভোরে মাদারীপুর জেলার শিবচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করে পুুলিশ।

এসপি জানান, নিহত মসজিদের ঈমাম দিদারুল ইসলামের কাছ থেকে সোনার বার কেনার কথা বলে কয়েক দফায় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন মো. ওহিদুর জামান। আসামি নড়াইল জেলার নড়াগাথি থানার কলাবাড়িয়া পশ্চিমপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে।

অহিদুর জামান মাদারীপুরের শিবচরের একটি মসজিদের ঈমাম এবং একে অপরের বন্ধুও। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চেয়ে চাপ দিলে ওহিদুল মসজিদের ঈমাম দিদারুল ইসলামকে খুনের পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার আগের রাতে ২০ আগস্ট দিদারুলের সাথে মসজিদে দেখা করে বলেন যে, ২১ আগস্ট রাতে এশার নামাজের পরে পাওনা টাকা ফেরত দিবেন।

ওহিদুর শিবচরের পাঁচচর এলাকা থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতিটি ক্রয় করে রাখেন এবং সোনারগাঁও মোগরাপাড়া থেকে ঘুমের ঔষধ ও কোকাকলার বোতল কিনেন। পরে কোকের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ঈমাম দিদারুল ইসলামকে খাওয়ে অবচেতন করে। পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার পরে ভিকটিমের ব্যবহৃত খাতায় ‘হিযবুত তাওহিদের সদস্য, সে আমাদের দল থেকে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে পালিয়ে এসেছে তাই তাকে আমরা মেরে ফেলেছি’ এমন আরো কিছু লেখা ছিল।

পরবর্তীতে ঘাতক ওহিদুর হত্যাকাণ্ডের পর মসজিদের ওজুখানায় গোসল করে দেহ কচুরী পানার মধ্যে ফেলে রেখে ঢাকা মিরপুর হয়ে মাদারীপুর চলে যায়। মূলত ওহিদুর পাওনা টাকা ফেরত না দেয়ার জন্যেই পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক হত্যাকাণ্ড ঘটায়। হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য নিষিদ্ধ সংঘঠন হিযবুত তাওহিদের নাম ব্যবহার করেন।

Leave A Reply