এবার চীনের মধ্যস্ততায় মিয়ানমারের সঙ্গে বসছে ঢাকা

0
নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনক্ষণ ঠিক না করা হলেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী চীনের মধ্যস্থতায় ফের বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ। এর

 আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একাধিক চুক্তি করেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার পর নতুন উদ্যোগে সফলতার আশা করছে ঢাকা।

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনৈতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে প্রস্তাব দিয়েছে চীন। তবে বৈঠকের তারিখ ঠিক হয়নি। চীন মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করে আমাদের জানাবে।’

এর আগে সচিবালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে আসা নতুন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানিয়েছেন, তার দেশও চায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যাক। আর এ ক্ষেত্রে তারা ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ রাখবে।

প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য গতকাল নোট ভারবালের মাধ্যমে নতুন প্রস্তাব পাঠিয়েছে চীন। সেখানে তারা জানায়, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকের আয়োজন করবে চীন। যেখানে বাংলাদেশ বৈঠক করতে রাজি হবে সেখানেই হবে ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠক।

নোট ভারবালে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু না করতে পারায় চীন এটাকে ‘দুঃখজনক’ বলেও উল্লেখ করেছে।

গত ২২ অগাস্ট রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার পর বিদেশি ক’টনীতিকদের সঙ্গে বসলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ক’টনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানান আব্দুল মোমেন। বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের দুর্দশার অবসানে বাংলাদেশ সামর্থ্যের সর্বোচ্চটা করছে বলে ক’টনীতিকদের জানিয়েছেন।’

প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন কী করবেন জানতে চাইলে মোমেন বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের অবসান করতে চাই আমরা। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

‘সারা বিশ্ব বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে এবং বিভিন্ন দেশ নানাভাবে মিয়ানমারকে সংকট সমাধানে উদ্যোগ নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছে।’

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। ১৯৮০ দশক থেকেই দেশে অবস্থান করছিল আরো কয়েক লাখ। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

জনাধিক্যের দেশে এই এই জনসংখ্যাটি চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। আর মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে প্রত্যাবাসনে দুই দফা দিন তারিখ ঠিক হলেও একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যেতে রাজি হননি নিরাপত্তাহীনতার কারণে।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। তবে চীন স্পষ্টতই মিয়ানমারের পাশে আছে। তারা জানিয়েছে, মিয়ানমারের ওপর কোনো চাপ তারা সহ্য করবে না।

যে রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের বিতারণ করা হয়েছে, সেই রাখাইনে চীনের বিপুল বিনিয়োগের তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে। আর দেশটির বর্তমান অবস্থানের কারণে প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে, যদিও চীন বাংলাদেশকে একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসনের জন্য চীনও ভূমিকা রেখেছিল। এই প্রক্রিয়া শুরুর জন্য চীনের প্রতিনিধিও ২২ আগস্ট কক্সবাজারে উপস্থিত ছিলেন।

দ্বিতীয় দফায় প্রত্যাবাসন শুরু না করতে পারার প্রসঙ্গে মোমেন দায়ী করেছেন মিয়ানমারকে। বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আস্থাহীনতা দূর করার দায়িত্ব মিয়ানমারকেই পালন করতে হবে।

মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব পালন করেনি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার গত ২২ আগস্ট এক প্রেস রিলিজ দেয়। সেখানে আমাদের ওপর দায় চাপিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

সব প্রস্তুতি নিয়েও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে না পারার জন্য ঢাকায় ক’টনীতিকদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ব্রিফিংয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তবে রোহিঙ্গা সংকট যে দেশের কারণে সেই মিয়ানমার দূতাবাস কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি এই বৈঠকে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে না পারা মিয়ানমারেরই ব্যর্থতা।’

বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

‘গঠনমূলক ভূমিকা’র আশ্বাস চীনের

সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার দপ্তরে দেখা করে বাংলাদেশে আসা নতুন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘চীন চায় প্রত্যাবাসন শুরু হোক। প্রত্যাবাসন যেন শুরু হয় সেজন্য চীন গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে।’

মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে নতুন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত লি জিমিং গতকাল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছেও তার পরিচয়পত্র পেশ করেছেন।

Leave A Reply