- কাজীপুর জবর দখলকৃত জমিতে রোপন করা ফসল নষ্ট করে উল্টো প্রকৃত জমির মালিককে ফাসানোর চেষ্টা - October 18, 2024
- ধনবাড়ীতে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা - October 18, 2024
- ঢাঙ্গীপুকুর আদর্শ গ্রাম নূরানী মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তরের শুভ উদ্বোধন - October 18, 2024
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আ. হাকিম ও খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,এলএসডি) মো. নজরুল ইসলামসহ গুদাম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও গুদাম কর্মকর্তারা ধান ব্যবসায়ী, দালাল-ফড়িয়াদের সঙ্গে যোগসাজস করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয় করছেন।
জানা যায়, উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রথম দফায় ৩১৭ মেট্রিক টন এবং দ্বিতীয় দফায় ৫২৮ মেট্রিক টনসহ মোট ৮৪৫ মোট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। কৃষকদের কাছ থেকে চিটা ও ময়লামুক্ত ১৪ ভাগ আদ্রতার ধান সংগ্রহ করে সংরক্ষণের বিধিবিধান থাকলেও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় তা মানা হয়নি।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে গত ৭ মে থেকে ধনবাড়ী উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ক্রয় করার কথা।
খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ মে থেকে ১৮ আগষ্ট পর্যন্ত প্রকৃত কৃষকদের দফায়-দফায় হয়রানি করে যতসামান্য ধান ক্রয় করলেও গত ১৯ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্টের মধ্যে তড়িঘড়ি করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে রাতের আধাঁরে মোট ৮৪৫ মোট্রিক টন নিম্নমানের ধান ক্রয় করে গুদামজাত করা হয়েছে।
উপজেলার মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান চাঁন মিয়া, সুরুজ্জামান, নরিল্লা গ্রামের কৃষক আ. মজিদ ঠাকুর, বলিভদ্র গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমানসহ স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, ধান ক্রয় অভিযান শুরু হলে স্থানীয় কৃষকরা নমুনা নিয়ে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের কাছে ধানের মান ও আদ্রতা পরীক্ষা করাতে যান। কিন্তু তিনি ধানের মান ভালো না এমন অজুহাতে প্রকৃত কৃষকদের বারবার ফিরিয়ে দিয়ে হয়রানি করতে থাকেন। অথচ সেই ধানই কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উৎকোচের বিনিময়ে গুদামে সরবরাহ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল ফড়িয়ারা। ফলে কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহ করতে না পেরে ন্যায মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কৃষকদের আরও অভিযোগ, গুদামে ধান সংগ্রহে মান যাচাইয়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। অপরদিকে টাকার বিনিময়ে নিম্নমানের ধান দিয়ে গুদাম ভর্তি করা হচ্ছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন খাদ্যগুদাম ঘুরে দেখা যায়, দালাল ফড়িয়াদের সরবরাহকৃত ধান যাচাই-বাছাই না করে তাৎক্ষণিকভাবে গুদামজাত করা হচ্ছে। কিন্তু কৃষকরা ধান নিয়ে আসলে নানা তালবাহানা করে কৃষকদের ধান পুনরায় রোদে শুকিয়ে নিয়ে আসার কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে।
মুশুদ্দি কামারপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আসাদুজ্জামান চাঁন মিয়া বলেন, বারবার রোদে শুকিয়ে ফ্যানের বাতাসে ধান ও চিটা পৃথক করে ৩০ মণ ধান নিয়ে গত তিন মাস যাবৎ খাদ্যগুদামে ঘুরছি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ও সোমবার খাদ্যগুদামে এসে ঘুষ না দিতে পারায় ধান বিক্রি করতে পারিনি।
খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সরবারহকৃত কৃষকদের তালিকা মোতাবেক ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। গুদামে কোনো সিন্ডিকেট নেই। সরকারি বিধিমোতাবেকই ধান ক্রয় করা হচ্ছে।
ধনবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আ. হাকিম বলেন, কে কৃষক, কে ব্যবসায়ী এটা আমার জানার বিষয় না। কৃষি তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষকদের ধান ফেরত দিয়ে রাতের আধাঁরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান ক্রয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, বন্ধের দিন এবং রাতেও ধান ক্রয়ের বিধান রয়েছে।
এ ব্যাপারে ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফা সিদ্দিকার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন। খাদ্য বিভাগের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।