ঈদ জামাতে প্রাণঘাতি ডেঙ্গুর প্রকোপে থেকে মুক্তির প্রার্থনা

0
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

এবারের কোরবানির ঈদের আগে থেকে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। সরকারি হিসাবে অন্তত সাড়ে আট হাজার মানুষকে ঈদের দিনও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে প্রাণঘাতি ডেঙ্গুর প্রকোপে  শতাধিক পরিবারের ঈদের আনন্দও ম্লান হয়েছে।

ঢাকার জাতীয় ঈদগাহে দেশের প্রধান ঈদ জামাতে বাংলাদেশের শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশার পাশাপাশি মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু রোগ থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ জামাতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, বয়সের লাখো মুসলমান।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ সকাল ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতে অংশ নেন।

ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করেন তিনি।

জামাত শেষে মুনাজাতে সৃষ্টিকর্তার কাছে তিনি ফরিয়াদ করে বলেন, সকলের ভুলগুলো যেন তিনি ক্ষমা করে দেন। মাতৃভূমি বাংলাদেশের উত্তোরত্তর সমৃদ্ধি যেন হয়। সমগ্র মুসলিম উম্মাহর যেন মঙ্গল হয়, পৃথিবীর সকল মজলুম মানুষ যেন শান্তি পায়।

‘বিশেষভাবে, গত কিছুদিন যে অবস্থাটা আমরা লক্ষ্য করেছি, বড় ধরনের একটি বালা, একটি ব্যধির সৃষ্টি হয়েছিল, ইতোমধ্যে আস্তে আস্তে একটু কমতেও শুরু করেছে। এক ধরনের রোগ জীবাণু, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু মানুষ, তারা ইন্তেকাল করেছেন, অনেকেই অসুস্থ হযে পড়েছেন, অনেকে এখনও হসপিটালে আছেন। যারা অসুস্থ আছেন… বিশেষভাবে দোয়া… আল্লাহ যেন তাদের নেক হায়াত দান করে দেন। আমাদের প্রতি রহম করেন।’

এদিকে ত্যাগের আহ্বান নিয়ে সোমবার সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা। মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলিমরা সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করছে। ঈদের দিন বৃষ্টি হতে পারে বলে আভাস দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অফিস। তবে দেশের কয়েকটি জেলায় সকালে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির খবর মিললেও রাজধানীতে ঈদের নামাজের সময় বৃষ্টি ভোগান্তির কারণ হয়নি।

পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাত সকাল আটটায় জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই জামাতের আয়োজন করেছে। এখানে প্রায় এক লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন। জাতীয় ঈদগাহে নারীদের জন্য ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল।

গত কয়েক বছরের মত এবারও রাজধানীতে প্রধান ঈদ জামাত ঘিরে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। যারা ঈদ জামাতে অংশ নিতে এসেছেন, তাদের যেতে হয়েছে তল্লাশির মধ্য দিয়ে। জায়নামাজ আর ছাতা ছাড়া আর কিছু যাতে কেউ সঙ্গে না আনেন, সে বিষয়ে আগেই সবাইকে সতর্ক করেছিল পুলিশ।

বায়তুল মোকাররমে এবারও সকাল ৭টা থেকে পাঁচটি জামাত হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় মসজিদ আর ঈদগাহগুলোর সীমানা ছাড়িয়ে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়েও বহু মানুষকে নামাজে অংশ নিতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল সাড়ে সাতটায় জামাত হয়েছে। এখানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ, সাংসদ, সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নিয়েছেন।

দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে প্রতিটি জামাতে দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন সবাই, যাতে বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলমানদের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। এরপর ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন সবাই; বাড়ি ফিরে যোগ দেন পশু কোরবানির আয়োজনে।

প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজের ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বার কোরবানি হয়ে যায়।

হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিমরা জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভের জন্য পশু কোরবানি করে থাকেন। আর তার নির্দিষ্ট ভাগ বিতরণ করা হয় দরিদ্রদের মধ্যে।

আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য পশু কোরবানি করাই উত্তম ইবাদত বলে ধর্মীয়ভাবে বলা হয়েছে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হলেও পরের দুই দিন, অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার বিধান আছে। কোরবানি ঈদের আনন্দ বেশি দরিদ্র-দুস্থদের জন্য। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়।

সকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। নামাজের খুতবায় খতিব কোরবানির তাৎপর্য তুলে ধরে বয়ান করেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিবনির্বিশেষে একত্রে নামাজ আদায় করেন। এরপর কোলাকুলির মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর শুরু হয় পশু কোরবানি। কোরবানির পরে সারা দিন ধরে মাংস বিতরণ চলবে দরিদ্র ও দুস্থদের মধ্যে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে অনেকেই যান কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন তারা। তারপর বাড়ি ফিরে আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে পশু কোরবানি করা হয়।

Leave A Reply