মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তালিকায় নাম নেই মধুপুরের মনসুর আলীর

0

Abdul Hamid

মো: আ: হমিদ টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি:

১৯৬২ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এ যোগদান শেষে সাত মাসের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে কুমিল্লার ময়নামতিতে বদলি হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট মনসুর আলী। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের জেলা বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, গলাচিপা, পিরোজপুর, বাউফলে স্মরণকালের ভয়াবহ সাইক্লোন হলে বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ শেষে ২ মাসের ছুটিতে বাড়িতে আসেন মনসুর আলী। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এ ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম নেই টাঙ্গাইলের মধুপুরের (অবসর সেনা সার্জেন্ট) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনসুর আলীর। সদর উপজেলার মালাউড়ি গ্রামের মৃত পিয়ার আলী শেখের ছেলে মনসুর আলীর বয়স এখন ৮০ বছর। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে তার চাওয়া মুক্তিযো
দ্ধা হিসেবে যেন তালিকায় তার নাম লেখা হয়। মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকায় তার নাম না থাকার বিষয়ে মনসুর আলী বলেন, যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন জীবন-জীবিকার যুদ্ধে। ভেবেছিলাম যুদ্ধ করেছি দেশ স্বাধীন করেছি এটাই বড় কথা সনদ দিয়ে কি হবে। কিন্তু জীবনবাজি রেখে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পরেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে তালিকা শুরু করলে আমিও আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এলাকার কিছু নব্য মুক্তিযোদ্ধা তাদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে, শত্রুতার বশবর্তী হয়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠেনি মনসুর আলীর। তালিকায় ঠাঁই হয়নি তার নাম। তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ঘুরেছেন কর্তৃপক্ষের দ্বা
রে দ্বারে। যুদ্ধাহতমুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ পারভেজ জুয়েল, বীর প্রতীক আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেনসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধাই তার পক্ষে সুপারিশ করলেও তালিকায় নাম উঠাতে ব্যার্থ হন তিনি। বাড়িতে বাবা মা স্ত্রী রেখে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অদম্য সাহস বুকে বেধে ছুটি কালীন সময়ে তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক এর ছেলে নায়ক সোহেল রানার ভাই মাহমুদ পারভেজ জুয়েল, আব্দুল মান্নান বিএসসি, আঃ গফুর মন্টু, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, কামাল, আলম, সাইদুর, মোস্তফা, হবিবুর, আঃ রাজ্জাক, আঃ হামিদ, নাসির খানসহ আরো কয়েকজকে সাথে নিয়ে মধুপুরে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন করেন মনসুর আলী। মাহমুদ পারভেজ জুয়েল কামাল, পারভেজ, সাব ইন্সপেক্টরের ছেলে আলম এর সহায়তায় প্রতিদিন ভোর রাতে ২টি রাইফেল এ সংগঠনে নিয়ে আসত। প্রথম প্যারেড ডাক বাংলা মাঠে করার পর পরবর্তীতে টেংরী গজারী বাগান, রানী ভবানী হাই স্কু
ল মাঠ ও জলছত্র মিশনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ করান মনসুর আলী। আর এ অস্ত্র প্রশিক্ষণের কমান্ডার হিসেবেও নেতৃত্ব দেন সে। অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হওয়ায় ময়মনসিংহ মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও প্রশিক্ষণ করাতে হয়েছে সার্জেন্ট মনসুর আলী কে। পাক হানাদার বাহিনীর একটি রেকি দল মধুপুরে প্রবেশ করে যুদ্ধের

আলীর নেতৃত্বে বংশাই নদীর দক্ষিণ পার্শ্ব ডিনামাইট ব্যবহার করে ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া হয়। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে মনসুর আলী বলেন, আমার ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হয়েও কোন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিতে পারেনি। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও আমরা স্বাধীনতা খুঁজছি। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসেও মনে পড়ে যুদ্ধকালীন প্রতিটি ক্ষণ, নিজেকে অনেক গর্ব মনে করি, দেশ আর দেশের মানুষের জন্য। একদিন আমি থাকবনা কিন্তু যুদ্ধের এই ইতিকথা অস্ত্রের ঝনঝনানির ন্যায় রয়ে যাবে প্রতিটি মানুষের হৃদয় থেকে হৃদয়ে। তাই মৃত্যুর আগে হলেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়
 নাম দেখে মরতে চায় বীর মুক্তিযোদ্ধা  পরিকল্পনা করলে তাদের পরিকল্পনা ঘুড়িয়ে দিতে গোপন তথ্য সংগ্রহের জন্য মনসুর আলীকে পাগলের বেশও ধরতে হয়েছে। পাক হানাদার বাহিনীকে ঘায়েল করতে এমবোসও লাগাতে হয়েছে মনসুর আলীকে। ১৪ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১১ নং সেক্টরের অধীন মধুপুরে নিয়োজিত থেকে তিনি যুদ্ধ পরিচালনা করে পাক বাহিনীর মেজর ইকবালকে নিহত করেন। ১৫ এপ্রি
ল হানাদার বাহিনী যাতে মধুপুর পাহাড়ে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য মনসুর
সার্জেন্ট মনসুর আলী। এটাই তার জীবনের শেষ চাওয়া

স্বাধীন বাংলা নিউজ টিভি
Leave A Reply