- কাজীপুর জবর দখলকৃত জমিতে রোপন করা ফসল নষ্ট করে উল্টো প্রকৃত জমির মালিককে ফাসানোর চেষ্টা - October 18, 2024
- ধনবাড়ীতে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা - October 18, 2024
- ঢাঙ্গীপুকুর আদর্শ গ্রাম নূরানী মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তরের শুভ উদ্বোধন - October 18, 2024
সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : ॥ দশ দিনের ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ,ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা,নাজিমখাঁন ও ছিনাই ইউনিয়নের নদী পার্শ্ববর্তী গ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পরেছে। পানিবন্দী মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিলেও সরকারী ভাবে অপ্রতুল শুকনো খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হলেও বেসরকারী ভাবে কেউ সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়ায়নি।
জানা যায়,তীব্র গতিতে তিস্তা ও ধরলা নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রতি মহুর্তে পানি বাড়ছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ,চরবিদ্যানন্দ,গাবুরহেলান,তৈয়বখাঁ,রামহরি,চতুরা মৌজা ,ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের চরখিতাবখাঁ,সরিষাবাড়ি,বুড়িরহাট,গতিয়াশাম মৌজা,নাজিমখাঁন ইউনিয়নের সোমনারায়ন ও হাসারপাড় মৌজা এবং ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে ছিনাই ইউনিয়নের জয়কুমোর,কালুয়ারচর,কিং ছিনাই মৌজার হাজার হাজার একর ফসলী জমি পানির নীচে ডুবে আছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘর বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় প্রায় ২০হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করছেন। বিভিন্ন স্থানে ভেসে গেছে তিন শতাধিক পুকুর ও বিলের মাছ । এসব এলাকার রোপা-আমনের বীজ তলা গুলোর অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জের কাঁচা রাস্তা গুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। এছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। লোকজন আশ্রয়ন কেন্দ্র,উচু জায়গা ও রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছেন।
সরেজমিনে তিস্তা নদীর পানির নিচে ডুবে যাওয়া চরখতিবখাঁ গ্রামের নুরআমিন (৬০) শাহজালাল (৪০) ও আফছেন (৪২) জানান, ৫দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় কাজ-কর্ম বন্ধ হওয়ায় ও টাকা হাতে না থাকায় হাটবাজারও করতে পাই না,ঠিকমত খাইতে পাইনা। একই গ্রামের মহাম্মদ আলী (৭২) জানান,”চৌকি ধরনার তীরত বান্ধিয়া ছাওয়া গুলাক নিয়ে কষ্টে আছং বাবা”। চরবিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম (৪৮) জানান,“আজকে হ্যামার বাড়ি নদী ভাংছে,বাড়ি সরেয়া মাইনষের জমিত ঘর তুললং”। চরবিদ্যানন্দ গ্রামের মনসুর (৫৫) জানান,এই চরেই ৮০০ পরিবার পানির নীচত আছে।
গতকাল তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চল গুলো থেকে নৌকা যোগে উঁচুস্থানে গবাদিপশু ও পরিবারের বিভিন্ন আসবাবপত্র পারাপারে পানিবন্দি মানুষদের ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। অনেক পরিবার অন্যের নৌকা ধার নিয়ে উঁচু স্থানে আসতে শুরু করেছেন।
উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ গ্রামের যুবলীগ নেতা আব্দুল মালেক জানান, নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পানিবন্দি কিছু পরিবার নৌকার অভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে উঁচু জায়গায় যেতে পারছেন না। তিস্তার ওপারে চরগুলোতে যাদের নৌকা আছে তারা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে উঁচু স্থানে চলে যাচ্ছে। আবার অনেকে আত্মীয় স্বজনের নৌকায় উঁচু জায়গায় চলে যাচ্ছে। যাদের নৌকা নেই তারা বিপাকে পড়েছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু-বক্কর জানান,চরাঞ্চলগুলোতে শুকনো জায়গা না থাকায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষজন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাজেবুল করিম জানান,বন্যার্তদের জন্য এপর্যন্ত সরকারী ভাবে ৪মেট্রিক টন চাউল এবং ১৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার এসেছে। প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী আরো ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দ চাওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ১৫জুলাই দুপুর পর্যন্ত ধরলার পানি বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার নদীর পানি বিপদ সীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।