ঈদে উত্তরঅঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের মহাসড়কের মোড়েমোড়ে যমদূত

0

সেলিম রেজা, স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিসঃ
কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, আবার কখনো হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত। এতে দীর্ঘ মহাসড়কের ভালো জায়গাতেও চলে আসছে পিচ্ছিল ভাব। তাছাড়া, বগুড়ায় মহাসড়কের অনেক জায়গার অবস্থাই বেশ খারাপ। ছোট-বড় অসংখ্য ক্ষত রয়েছে এখনো। সেগুলোতে পানি ভরে চোরাগর্তে পরিণত হচ্ছে। আসছে দিনগুলোতে আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও তেমন একটা সুখবর নেই।
ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে চাপ আরও বাড়ছে। এর সঙ্গে, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে মহাসড়কের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। যানজট বাড়বে।
এ অবস্থায়, বগুড়ায় যুক্ত ১৪০ কিলোমিটার মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ঈদে ঘরমুখো মানুষদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে। এর মধ্যে আছে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ৬৫ কিলোমিটার, বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক ৩০ কিলোমিটার ও বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক ৪০ কিলোমিটার।
প্রত্যেক ঈদে ঘরমুখো মানুষদের এ দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে, আগের চেয়ে মহাসড়কের এ অংশটুকুর অবস্থা অনেক ভালো বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। মহাসড়কের একাধিক জায়গা সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজখবর নিয়ে এ দাবির সত্যতাও পাওয়া গেছে।
কিন্তু, মহাসড়কের দীর্ঘ এ পথের মধ্যে একাধিক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে যমদূত! এসব মোড়ে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়াও, বাঁকা ও সরু সেতু রয়েছে মহাসড়কের একাধিক জায়গায়। মোড় বা সরু সেতু এলাকাগুলো এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ‘ডেথস্পট’ বলে পরিচিত।
মোড় ও সরু সেতু নির্দেশ করে মহাসড়কের দু’পাশ দিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এসব সাইনবোর্ডে ওভার টেকিং নিষেধ, সামনে স্কুল-কলেজ, সর্বোচ্চ গতি ২০ কিলোমিটার, সাবধান, ডানে-বামে মোড়, সামনে গতিরোধ ইত্যাদি সংকেত লেখা।
মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায এসব সতর্ক সংকেত লেখা সাইনবোর্ড শোভা পায় সারা বছরই। কিন্তু, যাদের জন্য এ আয়োজন, সে চালকদের চোখে এসব পড়ে কি-না, তা মনে হলে দ্বিধায় পড়তে হয়। কারণ, গাড়িচালকদের এসব স্থানে এসে গতি পরিবর্তন করতে খুব একটা দেখা যায় না।
ফলে, যমদূত হিসেবে পরিচিত এসব মোড় ও সরু সেতু এলাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। ঝরে যায় অনেক তাজাপ্রাণ। আহত হন শত শত লোক, চিরদিনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন অনেকে। চালকদের জন্য সতর্কতামূলক লেখাগুলো সাইনবোর্ডেই থেকে যায়। আর, ঈদে ঘরমুখো মানুষের আতঙ্ক হয়ে থাকে মহাসড়কের মোড়গুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের দক্ষিণে বগুড়ার শেষ সীমানা সীমাবাড়ী বাজার। উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলার রহবল এলাকা, বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের বগুড়া থেকে শুরু হয়ে শেষ এলাকা দক্ষিণ-পশ্চিমের নন্দীগ্রাম উপজেলা। এছাড়া বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের বগুড়া থেকে শুরু হয়ে সান্তাহার পৌর এলাকা শেষ সীমানা। মহাসড়কের এসব এলাকায় অসংখ্য মোড় রয়েছে। ঈদ এলেই এখানে গাড়ির চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
চালক ফজলুল হক বলেন, মোড় অন্যতম হলেও দুর্ঘটনার আরও কারণ আছে। ঈদে এক রুটের গাড়ি আরেক রুটে চলে আসে। এ কারণে, অনেক চালকই ঠিকমতো রাস্তাঘাট চেনেন না। এছাড়া, তীব্র যানজটের কারণে অনেক চালকই সহ্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। ফলে একটু ফাঁকা পেলেই বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালান। আর, ঘুমিয়ে পড়াও দুর্ঘটনার একটি কারণ।
সাইফুল ইসলাম নামে আরেক চালক বলেন, ঈদ সামনে রেখে মহাজনরা লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে দেন। এছাড়া রুট পরিবর্তন, লোভী মহাজন ও অনেক চালকের অদক্ষতার কারণে এ সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, বগুড়া জোনের আওতাধীন মহাসড়কের অবস্থা যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। মহাসড়কের মোড় এলাকায় সবসময়ই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে।
তিনি বলেন, ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণে ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিযুক্ত ও কার্যাদেশ হয়েছে। মহাসড়কের মোড় বা সরু সেতুর বিষয়গুলো তারাই দেখবেন।
তবে, মোড় ছাড়া মহাসড়কের ১৪০ কিলোমিটার অংশে তেমন একটা ঝুঁকি দেখছেন না বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের এ কর্মকর্তা।
পশ্চিমাঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সাধ্যমতো চেষ্টা চলছে। যানজটযুক্ত এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে কাজ করছে পুলিশ। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল এলাকায় উঁচু টাওয়ার বসানো হয়েছে। একাধিক মোবাইল টিম কাজ করছে। প্রত্যেক হাইওয়ে থানায় স্ট্যান্ডবাই ফোর্স ও রেকার থাকছে। থাকছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া পৌর এলাকায় কাজ করছে থানা পুলিশ।

Leave A Reply