প্রচন্ড শীতে কাঁপছে কুড়িগ্রামের ৫২০টি চরের ৫ লক্ষাধিক মানুষ

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামের নদীর তীরবর্তি ৫২০টি চরের প্রায় ৫লক্ষাধিক মানুষ। প্রকট শৈত্য প্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত চার দিন ধরে জেলায় সূর্য্যরে দেখাও মিলছে না। দিনে বেলা মেঘাচ্ছন্ন আকাশে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। কুয়াশার সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। ফলে দিনে রাতে প্রচন্ড ঠান্ডায় অস্থির কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষজন।

কুড়িগ্রাম জেলা সীমান্ত ঘেঁষা এবং দুধকুমর ফুলকুমর গঙ্গাধর সংকোষ কালজানি ধরলা ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬ নদ-নদীর তীরবর্তি ৫২০টি চরের প্রায় ৫লক্ষাধিক চরাঞ্চলবাসীসহ নিম্ন আয়ের শ্রমজীবি মানুষ সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগে পড়েছে। শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাপানি, এ্যাজমা, নিউমোনিয়া,হৃদরোগসহ শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল গুলোতে বাড়ছে রোগির সংখ্যা। গোবাদীপশুও রেহাই পাচ্ছে না শীতের তীব্র ঠান্ডা হতে।

 

 

 

ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা বাড়ায় ফুটপাতে বসা স্বল্প মূল্যের পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ভীর জমাচ্ছে শীতার্ত মানুষ। নিজেদের সাধ্যমত কিনছেন সামান্যতম শীতবস্ত্র।

 

 

 

সন্ধ্যার পরপরই গ্রাম ও শহরের দোকানগুলো ক্রেতা সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিনে বা রাতে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের জন্য চেষ্ঠা করছেন। এদিকে তীব্র শীতের কারণে দিনমজুররা কাজকর্ম তেমন না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটছে।

 

 

 

নাগেশ্বরী উপজেলার চরাঞ্চল নদী ভাঙন কবলিত ও সীমান্ত ঘেঁষা দ্বীপচর নারায়নপুর ইউনিয়নের চরঝাউকুটি, চরবারোবিশ, অষ্টআশীর, মাঝিয়ালী, পাখিউড়া, আইড়মারী, ভেড়ামারা, কালাইয়েরচর, চৌদ্দঘুড়িসহ বিভিন্ন চরে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ চরাঞ্চলের শতভাগ প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ অশিক্ষিত হতদরিদ্র ও কর্মহীন। শ্রমজীবি দিন মুজুর মানুষ দূর্ভোগের শিকার হয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে এবং প্রতিনিয়ত শীত জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

 

 

 

নারায়নপুর ইউনিয়ন গঙ্গাধর দুধকুমর নদী বেষ্টিত চৌদ্দঘুড়ি চরের বাসিন্দা দিন মুজুর তহিদুল ইসলাম, বাচ্চু মিয়া, রহমান আলী, মাইদুল ইসলাম বলেন, বাহে এবার পৌষের আগাম শীত আসায় হামরা চরের মানুষজন খুবই কষ্ঠে আছি। দিন হাজিরা দিয়া চলি। দিনে ৭/৮ ঘন্টা কাজ করিয়া সামান্য কিছু টাকা হাজিরা পাই তা দিয়া সংসারের খরচাদি করি। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় ঘরোত থাকি বাহির হবার পাইচি না। কাজকর্ম কমে কেউ নিচ্ছে না। অনেক কষ্টে দিন যাপন করছি। ক্যামনে শীতের কাপড়চোপড় কিনি। বাধ্য হয়ে পুরাতন যা তা দিয়েই শীত পার করার চেষ্ঠা করছি।

 

 

 

নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান বলেন, নারায়নপুর ইউনিয়ন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে অবস্থিত ও চরাঞ্চল। এ ইউনিয়নের প্রায় ৭০ হাজার মানুষ শৈত্যপ্রবাহে অতি কষ্টে দিন যাপন করছে। এ যাবত উপজেলা প্রশাসনের দেয়া ৬শত কম্বল পেয়েছি তা বিতরণ করা হয়েছে। কম্বল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক অপ্রতুল। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সু দৃষ্টি কামনা করছি।

 

 

 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, আমরা কম্বল পাওয়া মাত্র ইউএনওদের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের দ্বারা শীতার্ত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করে আসছি। নারায়নপুর ইউনিয়নে অতিদরিদ্রের মাঝে কম্বল বিতরণের বিষয়ে দেখবো।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.