- সিউর সাকসেস স্কুল এন্ড ক্যাডেট কোচিং এর অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত - October 19, 2024
- A large public meeting was held at Dhanbari on the initiative of BNPMd. - October 19, 2024
- BNP initiative in Dhanbari to pray for the souls of those martyred in the mass uprising - October 19, 2024
নিউজ ডেস্ক:
ভারত থেকে জ্বালানি তেল আনতে পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণে সে দেশ থেকে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানি করবে বাংলাদেশ। মাটির নিচ দিয়ে পাইপলাইন নির্মাণ করে এই তেল আমদানি করা হবে।
ইন্ডিয়া বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) নামে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৬ কোটি ২৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ভারতের শিলিংয়ের নুমালিগড় রিফাইনারি (এনআরএল) থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপোতে এই পেট্রোলিয়াম আমদানি করা হবে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা হলো প্রায় ৫৯ লাখ মেট্রিক টন। বতর্মানে দেশে বিদ্যমান গ্যাসসঙ্কটের কারণে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১ সালের পর দেশের পুরাতন বিভিন্ন ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন কমতে থাকবে।
দেশে আর কোনো নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। ঢাকা এবং তার আশপাশের এলাকায় জ্বালানি তেলের বতর্মান চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। যা ঢাকায় অবস্থিত গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোগুলোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। চাঁদপুরে অবস্থিত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় ১ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকারে করে বর্তমানে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়।
বর্তমানে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, ও শিল্প খাতে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উন্নয়নকাজে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসের ঘাটতি মোকাবেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি শিল্প কারখানাও স্থাপিত হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।
নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে কৃষি সেচ মৌসুম হিসেবে বিবেচিত হয়। এ সময়ে সেসব এলাকায় জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌপথে ও রেলপথে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। নৌপথে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও চিলমারি, রেলপথে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো, রংপুর ডিপো, নাটোর, রাজশাহী, হরিয়ানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
জানা গেছে, পার্বতীপুর ডিপোতে আইবিএফপিএল প্রকল্পের রিসিভ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৬ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি ট্যাংক নির্মাণ করা হবে। এর জন্যই প্রয়োজন ১৮৭ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ১২৬ দশমিক ১৪ একর জমি হুকুম দখল করা হবে। এ ছাড়া সৈয়দপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেল সরবরাহ করার জন্য ১২ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ৮ একর জমি হুকুম দখল করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য মোট ১৯৯.৩৪ জমি অধিগ্রহণ ও ১৩৪.১৪ একর জমি হুকুম দখল করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় সৈয়দপুরে স্থাপিতব্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহের জন্য প্রায় সাত কিলোমিটার দীর্ঘ একটি শাখা পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বার্ষিক প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল প্রয়োজন হবে। ডিজাইন অনুুযায়ী আইবিএফপিএলের মাধ্যমে বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল নুমালিগড় রিফাইনারি থেকে পার্বতীপুর ডিপোতে গ্রহণ সম্ভব হবে। বর্তমানে পার্বতীপুর ডিপোর চাহিদা দৈনিক প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন। রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উত্তরবঙ্গের রংপুর ও চিলমারী ডিপোর ৫০০ মেট্রিক টন দৈনিক চাহিদা।
বিপিসি বলছে, উত্তরাঞ্চলের জ্বালানির ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেডের শিলিগুড়ির মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে দিনাজপুরের পাবর্তীপুর ডিপোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেই প্রেক্ষাপটে ৩০৮ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকার এই জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখলের প্রকল্প। বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে তিন বছর সময় লাগবে।
প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, বিদেশ প্রশিক্ষণ দু’শ্রেণীতে মোট ২৭ জনকে দেয়ার জন্য ২ কোটি ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু ডিপিপিতে দেখা যায়, বি গ্রেডে ২১ দিনে ৫ জনের জন্য ৯১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ফলে এখানে জনপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ১৩ লাখ টাকা। আর সি গ্রেডে একই সময়ের জন্য ১০ জনের বরাদ্দ ৯১ লাখ টাকা। ফলে এখানে ব্যয় হচ্ছে জনপ্রতি ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর হোটেল ভাড়া ৫ জনের জন্য ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এখানে জনপ্রতি ব্যয় ৪৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর ১০ জনের জন্য ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এখানে জনপ্রতি ব্যয় ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি উইং বলছে, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন পদ্ধতিসংক্রান্ত পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্রের ২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অর্থ বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের কোনো ছাড়পত্র ডিপিপির সাথে সংযুক্ত করা হয়নি। লিক্যুইডিটি সার্টিফিকেট ছাড়া কিভাবে প্রকল্প প্রস্তাব করা হলো। মূল প্রকল্প অর্থাৎ আইবিএফপিএল প্রকল্পটির ধরন, প্রকৃতি ও মেয়াদকাল সম্পর্কে প্রকল্পের ডিপিপির পটভূমিতে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল একটি জটিল প্রক্রিয়া। দুবছরে এই কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে যা আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.