সীমান্ত দিয়ে কিছু মানুষ ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে, স্বীকার করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

 

নিউজ ডেস্ক:

ভারত সীমান্ত দিয়ে কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, বিএসএফের পুশইনে বাংলাদেশিদের আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। বাংলাদেশি নাগরিক না হলে কেউ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বাংলাদেশি ছাড়া কাউকে সীমান্ত দিয়ে দেশের মাটিতে ঢুকতে দেয়া হবে না। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্তে প্রস্তুত রয়েছে। অবৈধভাবে পুশইনের যেকোনও চেষ্টা বিজিবি প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তারা সেই প্রস্তুতি নিয়েই সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে পুশইনের (অনুপ্রবেশ) প্রচেষ্টা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা জানান।

প্রসঙ্গত, ভারতের আসামে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর তাতে বাদপড়াদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর শঙ্কা তৈরি হয় বাংলাদেশে। আসামের নাগরিকপঞ্জি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভাবনার কিছু নেই বলে বাংলাদেশ সরকারের তরফে বলা হলেও গত কিছু দিন ধরে ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে বেশ কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঢোকানো হচ্ছে। ঝিনাইদহের শুধু মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে আসা ২৩৮ জনকে গত নভেম্বর মাসে আটক করেছে বিজিবি।

এদিকে ভারত থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং মাদক, চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ করতে বিজিবির সঙ্গে রাত জেগে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখানপুর গ্রামবাসী। সীমান্তে নজরদারি জোরদার করতে গ্রামের বাসিন্দারা টর্চলাইট ও লাঠি হাতে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত পালা করে পাহারায় থাকছেন।

বিভিন্ন সীমান্তের এমন ‘পুশব্যাক’ চেষ্টার বিষয়টি স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের বিজিবি কয়েক জায়গায় এদের ঢুকতে দেয়নি, অ্যালাও করেনি। আমরা দেখেছি, বিগত দিনে বিভিন্ন সময়েও ৫ জন, ১০ জন কিংবা ২৫-৫০ জন করে তারা বাংলাদেশে পুশইন করানোর জন্য প্রচেষ্টা নিয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদেরকেও পুশইন করার একটা প্রচেষ্টা নিয়েছিল। রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে ভারতের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে ভারতের ঢুকে গিয়েছিল। তারা বাংলাদেশে চলে আসতে চেয়েছিল, সেগুলো আমরা ঢুকতে দিইনি।

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, এদের সংখ্যা হাজার হাজার নয়, কয়েকশ। বিষয়টি আতঙ্কের মনে করছেন কি না- এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা মোটেই আতঙ্কের বিষয় নয়। আমরা কোনোভাবেই বাংলাদেশি অধিবাসী ছাড়া কাউকে বাংলাদেশের মাটিতে ঢুকতে দেব না। আমাদের বিজিবিও সচেতন আছে। আমাদের সুনিশ্চিত হতে হবে যদি বাংলাদেশি নাগরিক হয়, তাহলে এগুলো আমরা রিসিভ করতে পারি। আর যদি বাংলাদেশি নাগরিক না হয়, তাহলে কোনোক্রমে গ্রহণ করব না।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে অনেকেই গিয়ে থাকেন। যখন ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়, তখন এদেরকে পাঠিয়ে দেয়। অনেকভাবেই ঘটনা ঘটে যায়। এরকম ঘটনা যদি কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই রিসিভ করব। আগের চেয়ে তো পুশব্যাকের ঘটনা বাড়ছে- এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হয়ত কিছু বেড়েছে, আমি সেটা অস্বীকার করছি না। তাদের রাজ্যে একটু কড়াকড়ি করেছে, সেজন্য হয়ত আমাদের যারা ইচ্ছা করে থেকে গেছেন কিংবা তারা ভিসার তোয়াক্কা করেনি বা এ বিষয়ে চিন্তা করেননি; তারা হয়ত এরকমভাবে আন-অফিসিয়ালি আসার প্রচেষ্টা নিতে পারেন। কেউ শ্রমজীবী হিসাবে, কেউ পেশাদার হিসাবে যায়, কেউ অন্য কোনো সেবা যেমন- চিকিৎসা বা পড়াশোনা করার জন্য। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়ে থাকলে হয়ত তাদের এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। এরকম হতে পারে।

বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে এটা উস্কানিমূলক কি না-এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, না, কোনো উস্কানিমূলক নয়। যদি হাজার হাজার বা শতশত হতো, তাহলে একটা আলোচনার ব্যবস্থা হতো। ভারত সরকার তো আমাদের কাছে কোনো চিঠি দেয়নি, কোনো আবেদনও করেনি। যারাই গিয়েছিল তারাই পালিয়ে আসছেন কি না কিংবা অবৈধভাবে গিয়েছেন বা অবৈধভাবে ফেরত আসছেন কি না-সবকিছু আমাদের জানতে হবে। পুশব্যাক’নিয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে অফিসিয়ালি কোনো আবেদন নিবেদন নেই। ফলে এ বিষয়ে এখনই ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার পক্ষপাতিও নন তিনি।

আইএস টুপিতে ‘অ্যালার্মিংয়ের কিছু নেই’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি কীভাবে আইএসের লোগো আঁকা টুপি পেলো সেটি আমি নিজেও জানতে চাই। কোনোভাবেই জেলখানায় বন্দি আসামির বাইরে থেকে টুপি পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু ওর হাতে টুপি গেলো! এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত করেই আসল ঘটনা বলা যাবে। গুলশান হামলার আসামির আইএসের চিহ্ন সম্বলিত টুপি পরার বিষয়টাকে ‘অ্যালার্মিং’ মনে করছেন কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, কোনো অ্যালার্মিং নয়, কাপড়ের একটা টুপি মাথায় দিয়েছে। এটায় অ্যালার্মিংয়ের কী বিষয় আছে? এরা তো সবসময়ই বলছে, এরা ওই মতাদর্শী। আমরা সবসময় বলেছি, আমাদের দেশে এগুলো নেই। এগুলো সব হোমমেইড জঙ্গি। আর ওরা ওখানে (আইএস) কানেক্টেড হতে চেয়েছে, এটা সবসময় বলেছে। ফলে এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।

টুপির উৎস জানা গেছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ না কেউ তো দিয়েছে। কে দিয়েছে, আমরা একটু জেনে নিই। কারণ বন্দিটাকে (আদালতে) নিয়ে গেছে যখন, তখন জনগণের ভেতর দিয়েই তো গেছে। কীভাবে পেয়েছে, সেটা আমাদের এখন একটু দেখার বিষয়। আমরা দেখে নিই। না দেখে এটার সম্পর্কে আমরা বলতে পারব না। তবে আমরা যেটুকু দেখেছি, কারাগার থেকে এমন কিছু আসেনি, সেটা কারা কর্তৃপক্ষ বলছে। পুলিশ বলছে, তারা এটা সাপ্লাই হতে দেখেনি। কাজেই কীভাবে আসল, তদন্তের বাইরে আমরা কিছু বলতে পারব না। আমরা পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেব, এটা কীভাবে পেয়েছিল। কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে আরেকটি তদন্ত করবেন কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই হবে। বেরিয়ে আসবে, সবই আসবে।

প্রসঙ্গত. গত ২৭ নভেম্বর আলোচিত হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সেসময় আদালতে উপস্থিত মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যানের মাথায় আইএস-এর ছবিসহ টুপি দেখা যায়। এই টুপি সে কারাগার থেকে সংগ্রহ করেছে কিনা কারা অধিদফতর তা তদন্ত করে। গত শনিবার কারা মহাপরিদর্শকের (আইজি প্রিজন) কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই টুপির বিষয়ে কারাগারের কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.