আলীকদমের কৃষকরা পান চাষে স্বাবলম্বী

সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি
উৎপাদন খরচ কম ও বহুবর্ষজীবী হওয়ায় পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের, বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ব্যাপক হারে পান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলার সদর ইউনিয়ন, চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন ও নয়াপাড়া ইউনিয়নে এবার পানের আশানুরোপ ফলন হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।
আলীকদম উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের পান চাষের ব্লক ঘুরে দেখা যায় পানের বরজের নজরকাড়া দৃশ্য। পান চাষ একটি দীর্ঘ মেয়াদী লাভজনক ফসল। অনেক কৃষক পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ কর সংসার চালাচ্ছেন বলে জানান যায়। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসলের চেয়ে রাসায়নিক সার অনেক কম ব্যবহার হয় ও জৈব সারের ব্যবহার অনেকটাই বেশি। চাষাবাদ পদ্ধতিতে পান চাষে প্রথমে কাটিং সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করতে হয়। এরপর ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে ডাল থেকে সবুজ লতা বের হয়ে ছেয়ে যায় পান পাতার লতা। তারপর শুরু হয় চাষিদের পান সংগ্রহ। এক বিঘা জমিতে পান চাষ করে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব বলে জানান পান চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই বছর অত্র উপজেলায় ৩ টি ইউনিয়নের মধ্যে ব্যাপক হারে পান বরজ চাষ করেছে কৃষকরা। ১নং সদর ইউনিয়নে ৩১ হেক্টর, ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নে ৫ হেক্টর, ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নে ২ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। এখানে উৎপাদন লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হেক্টর। ৪টি ইউনিয়নে নতুন পুরাতনসহ মোট- ২০০ জন কৃষক পান চাষ করেছেন বলে জানা যায়। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে পানের বরজ। উপজেলার প্রায় ইউনিয়নে রয়েছে উচু ও উর্বর জমি যা পান চাষে অত্যন্ত উপযোগী।
তারাবুনিয়া গ্রামের পান চাষী মো. মনু বলেন, নতুন বরজে বিঘা প্রতি প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সুন্দরভাবে পরিচর্যা করলে নতুন বরজ থেকে ৬ মাসের মধ্যেই পান তোলা সম্ভব। এবার পানের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দামও বেশ ভালো। আগের চেয়ে পান চাষ বেশি হচ্ছে আবার পদ্ধতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তার সাফল্যের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমি ২৫ শতাংশ জমিতে পানের চাষ শুরু করি। এখন ১ বিঘা জমিতে পানের বরজ চাষ হচ্ছে আমার।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তাগণ এসে আমাদের পান চাষের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন এবং রোগবলায় থেকে পান বরজ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন।
কলার ঝিরি এলাকায় পান চাষী মো. করিম বলেন, এবার পানের ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দামও বেশ ভালো।তিনি আরও বলেন, পান বরজ চাষ করে আমি আগের তুলনায় অনেক ভালো আছি অর্থনৈতিক ভাবে। বিগত সময়ে তামাক চাষ করে অনেক পরিশ্রম করেছি কিন্তুু তেমন লাভ করতে পারি নাই। এখন তামাক বাদ দিয়ে পান বরজ করেছি। পান চাষ বুঝে শুনে চাষ করলে এবং সঠিক ভাবে পরিচর্চা করতে পারলে ১ বিঘা (৩৩ শতক) পানের বরজ থাকলে তার আর পেছনের দিকে ফিরে দেখতে হবে না। সংসার খরচসহ অনেক কিছু করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা উজ্জল কুমার দে জানান, চৈক্ষ্যং দক্ষিণ ব্লকে এবার ৫ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হয়েছে। প্রতি বছর এ এলাকায় পানের চাষ বাড়ছে। তবে পান চাষিদের পানে পচন,নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের।
আলীকদম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সোহেল রানা বলেন, পান চাষিদের কে আমরা সর্বদা বিভিন্ন ধরণের কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে আসছি। ৩টি ইউনিয়নে পান চাষে আশানুরুপ ফলন হয়েছে। সেখান কার প্রান্তিক চাষীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে কৃষকরা। যদি সরকারিভাবে কোন প্রণোদনা দেওয়া হয় তাহলে কৃষরা আরও পান চাষ করে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, এ অর্থ বছরে পান চাষের উপর প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের প্রণোদনার জন্য সরকারের নিকট প্রকল্প পাঠানো হবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.