সরিষাবাড়ীতে দুই কোটি টাকার হাট ৮৮ লাখ টাকার ইজারা দেওয়ার অভিযোগ

জামালপুর প্রতিনিধি

 

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ১০টি হাটবাজার ইজারায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বড় অনিয়ম হয়েছে পিংনা ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ গরুর হাট ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে। উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কৌশলে আগের বারের ইজারামূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা থেকে কমিয়ে এবার ৮৮ লাখ টাকায় কাউন্সিলর সাখাওয়াত হোসেন মুকুল হাটটির ইজারা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী এই কাউন্সিলর এবং ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের প্রভাবে হাটবাজার ইজারা নিতে ইচ্ছুক অনেকেই দরপত্র কিনতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। আবার অনেকে দরপত্র কেনার পরও তা বাক্সে ফেলতে পারেননি।

জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে গত পহেলা মার্চ উপজেলার ১০টি হাটবাজারের ইজারার জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫ মার্চ ছিল দরপত্র বিক্রি ও দরপত্র বাক্সে জমা দেওয়ার শেষ দিন। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এবং সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখা দরপত্র বাক্সে যাতে আর কেউ দরপত্র জমা না দিতে পারে সেজন্য সেদিন ওই দুটি জায়গায় পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল ও তার লোকজন পাহারা বসায়। সাখাওয়াতুল আলম মুকুল তার জান্নাত এন্টারপ্রাইজের নামে ছাড়াও উপজেলার সবচেয়ে বড় গরুর হাট গোপালগঞ্জ হাটের জন্য তার নিয়ন্ত্রণাধীন আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা দরপত্র বাক্সে জমা দেন। বাকি নয়টি হাটের জন্যও স্থানীয় ইজারা প্রত্যাশীরা দরপত্র জমা দিতে পারেননি।

পহেলা মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত ১০টি হাটের জন্য ৩ লাখ ১৭ হাজার ২০০ টাকায় ৬৫টি দরপত্র ফরম বিক্রি করা হলেও দরপত্র বাক্সে জমা পড়ে মাত্র ৩৫টি দরপত্র। ১০টি হাটের মধ্যে গোপালগঞ্জ হাটের গত অর্থবছরের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৯১ লাখ ৫২০ টাকা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, পৌর কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুন অর রশিদসহ ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন নেতা উপজেলা প্রশাসনের যোগসাজশে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওই হাটটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুলের জান্নাত এন্টারপ্রাইজের নামে ইজারা নিয়েছেন। এতে করে এই হাট থেকে ১ কোটি ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাটবাজার ইজারার দরপত্র ফরম কিনতে গিয়েও চাপের মুখে ফিরে আসা এক ইজারাপ্রত্যাশী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। উপজেলা চত্বর থেকে সাখাওয়াতুল আলম মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলে আমাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কাউন্সিলরের প্রায় শতাধিক ক্যাডার সেখানে অবস্থান করছিল। যার ফলে আমরা দরপত্র ফরমই কিনতে পারিনি।’

উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন রতন বলেন, ‘চাপারকোনা হাটবাজারের দরপত্র ফরম কিনতে গিয়েছিলাম। কিনতে পারিনি। কাউন্সিলর মুকুলের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল বলেন, ‘সরকারি নীতিমালা মেনে হাটের ইজারা হয়েছে। সরকার নিয়মের বাইরে কিছু করবে না। হাটের ইজারায় অনেক প্রতিযোগিতা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি একটা বৈঠকে আছেন জানিয়ে পরে কল করতে বলেন। আর সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.