- সিউর সাকসেস স্কুল এন্ড ক্যাডেট কোচিং এর অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত - October 19, 2024
- A large public meeting was held at Dhanbari on the initiative of BNPMd. - October 19, 2024
- BNP initiative in Dhanbari to pray for the souls of those martyred in the mass uprising - October 19, 2024
অনলাইন ডেস্ক:
মাতৃগর্ভে সন্তানের হৃৎস্পন্দন, শারীরিক ত্রুটিসহ জরায়ুর পানির পরিমাণ ঠিক আছে কিনা দেখতে চিকিৎসকরা আল্ট্রাসনো করার পরামর্শ দেন। গর্ভকালীন অবস্থায় করা এই পরীক্ষার কারণে প্রসূতি নারীরা পড়ছেন নানাবিধ ঝুঁকিতে। অধিকাংশ দম্পতিই পরীক্ষাটির মাধ্যমে অনাগত সন্তানের লিঙ্গ নির্ণয়কে প্রাধান্য দেন। অনেক ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোর ফল অনুযায়ী সন্তানের জন্ম না হলে বাধে বিপত্তি। আর এর পুরো দায় নিতে হয় প্রসূতি মাকে। এমনকি সংসারও ভাঙে অনেক নারীর।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে জন্ম নেয়া এক নবজাতককে ঘিরে ধূম্রজাল তৈরি হয়। এরপর জেলার সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে অনাগত শিশুর লিঙ্গ জানা নিষিদ্ধ করে সিভিল সার্জন কার্যালয়।
জানা যায়, সদর হাসপাতালে একই দিন তিন নারী দুটি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তবে এক নারীকে চিকিৎসকরা কন্যা শিশু তুলে দিলে বাধে বিপত্তি। ওই নারী শিশুটি তার নয় জানিয়ে আরেক নারীর কোলে তুলে দেয়া ছেলে শিশুকে তার বলে দাবি করেন। এর কারণ হিসেবে ওই নারী জানান, একাধিকবার আল্ট্রাসনোগ্রাম চিকিৎসকরা তার গর্ভে ছেলে শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন।
ওই ঘটনার পর গর্ভকালীন আল্ট্রাসনোগ্রাম করা নিয়ে বিতর্ক উসকে উঠেছে। এরপর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় আল্ট্রাসনোগ্রাম করে শিশুর লিঙ্গ জানা নিষিদ্ধ করে চিকিৎসকসহ জেলার সব হাসপাতালে চিঠি দেয়।
বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক দম্পতিই পুত্রসন্তান কামনা করে থাকেন। আর এমন আকাক্সক্ষার সব চাপ গিয়ে পড়ে সন্তানসম্ভবা নারীর ওপর। অনেকেই আল্ট্রাসনোগ্রাম করে আগাম দেখে নেন অনাগত সন্তান পুত্র কি কন্যা। সন্তান জন্মানোর পর উল্টোটি হলেই গর্ভধারিণীর ওপর চলে নানান দোষারোপ। অনেক মা শিকার হন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে অনাগত সন্তানের লিঙ্গ নির্ণয় প্রসূতির জন্য মনোযাতনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মায়ের আবেগ-অনুভূতির বিষয়গুলো উপেক্ষা করে নির্দিষ্ট কোনো লিঙ্গের সন্তানপ্রত্যাশা নারীর ওপর আরেকটি বৈষম্য। অনেকটা নিভৃতেই নারীকে এই ধরনের যাতনা সয়ে যেতে হয়। এমন মানসিক যাতনার কারণে অনেক নারী স্বাভাবিকতাও হারিয়ে ফেলে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মো. তাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শুধু ছেলে সন্তান হবে কি-না এটা জানতে অধিকাংশ দম্পতি আল্ট্রাসনো করায়। দেশে এখনো অনেক বয়স্ক নারী গর্ভবতীর বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে অনাগত সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে হবে এবং কেন হবে এসব নিয়ে নানাভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে থাকে।’
‘এরপর আলট্রাসনোগ্রাফিতে যখন জেনেই যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই কন্যা সন্তানের খবর শুনে সেই গর্ভবতীর কয়েকটি মাস খুব খারাপ যায়। মায়ের আবেগ, অনুভূতির ওপর যেহেতু সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে তাই দুজনই খুব খারাপ সময় পার করে। সমাজের এ ধরনের বৈষম্যমূলক অবস্থা পরিবর্তন করা জরুরি।’
কয়েক বছর আগে প্রতিবেশী ভারত শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছে। কারণ আলট্রাসনোগ্রাফি করাতে এসে চিকিৎসকের কাছে প্রায় সব নারী বা দম্পতিরই প্রথম কথা, ‘সন্তানটি ছেলে হবে না মেয়ে হবে?’ পরীক্ষার মাধ্যমে আগেভাগেই সন্তানের লিঙ্গ জেনে যাওয়ার সুযোগ থাকায় দেশটিতে অহরহ কন্যাভ্রূণ হত্যার ঘটনা ঘটে। এটা রুখতে আইন করে লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে অভিভাবক ও চিকিৎসকের পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশেও তেমন পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার যদি এ বিষয়ে কঠোর হয় তাহলে সেটি নারীর মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। একটা সুস্থ জাতির জন্য সেটা ভীষণ জরুরি। কারণ মা ভালো থাকলে সন্তান ভালো থাকবে। তাছাড়া সমাজ থেকেও লিঙ্গকেন্দ্রিক বৈষম্য কমে আসবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.