কমছে না পেঁয়াজের দাম, দিশেহারা ভোক্তা

অনলাইন ডেস্ক:

পেঁয়াজের ঝাঁজ কিছুতেই কমছে না। এক সপ্তাহ আগে পেঁয়াজ ২০০ টাকার নিচে নামলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। সরকারি কোন উদ্যেগই কাজে আসছে না পেয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে। সিন্ডিকেটের কথা বলা হলেও সিন্ডিকেট সদস্যদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় মাস দুই ধরে অস্থিরতায় ৩০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। সংকট কাটাতে সরকারিভাবে তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে পিয়াজ বিমানে করে আমদানি করা হয়। এতে দাম কিছুটা কমলেও গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের সরবরাহ ছিল না বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

ফলে ফের দাম বেড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমদানি করা বার্মা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে, মিসরের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি দরে। তবে বেশির ভাগ পেঁয়াজের মানও ভালো নয়।

সরকারের পেঁয়াজ আমদানি, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা ঘোষণায় কোনো সুফলই দেখছেন না সাধারণ ক্রেতারা। রাজধানীর পাইকারি বাজারে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৫০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অপরদিকে, খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ২০০-২৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সম্প্রতি ভোক্তাদের উদ্দেশে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, পেঁয়াজের দাম না কমলে এর ব্যবহার বাদ দিতে হবে। এক শ্রেণির মুনাফাখোর সিন্ডিকেট নানা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। পেঁয়াজের বেলায়ও সিন্ডিকেট এমনই করেছে। দাম না কমালে তাদের শিক্ষা দিতে পেঁয়াজ কেনা বাদ দিতে হবে।

হাতিরপুল বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি নাকি দাম কমাবে এমন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি- সেটাই বুঝতে পারছি না। একাধিক মন্ত্রণালয় বলছে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে দাম বেড়েছে। তাহলে প্রশ্ন- সিন্ডিকেটের সদস্যদের বের করা হচ্ছে না কেন? প্রধানমন্ত্রী ক্যাসিনো সম্রাটদের ছাড় দেননি, কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিন্ডিকেটদের রেহাই দিচ্ছে কেন?

কারওয়ান বাজারের নিত্যপণ্য কিনতে আসা এমদাদুল হক বলেন, ২ মাস ধরে পেঁয়াজ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এ জন্য পেঁয়াজ খাওয়া কমিয়েও দিয়েছি। কিন্তু পণ্যটির দাম কমাতে পারছে না সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এর দায়ভার সরকারের কাঁধে গিয়ে পড়ছে। আর আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা বাজার, নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার ও মিসরের পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর পেঁয়াজ পাতা প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পেঁয়াজের দাম কমিয়ে আনতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। সমুদ্র বন্দরসহ আকাশপথেও পণ্যটি আনা হচ্ছে। দেশে ৪-৫টি ফ্লাইট বুক করে পেঁয়াজ আনা হয়েছে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসছে।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের সংকট থেকে দাম বাড়ছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে দেশের বড় শিল্প গ্রুপগুলো বিদেশ থেকে সমুদ্রপথে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে ৫৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছে এস আলম গ্রুপ।

আরও দুটি শিল্প গ্রুপ আড়াই হাজার টন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছে। এসব পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় সরকার জরুরি ভিত্তিতে আকাশপথে উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। উড়োজাহাজে এস আলম গ্রুপ প্রতিদিন ১০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করছে।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স এমএন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আলী হোসেন খোকন বলেন, ‘পেঁয়াজ যে পরিমাণে আমদানি করা হচ্ছে তা চাহিদার অনুপাতে যথেষ্ট নয়। ফলে দাম কমছে না। আবার পাইকারি বাজারে আমদানি বাড়ার কিছুটা প্রভাব পড়লেও খুচরা বাজারে তেমন প্রভাব নেই। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বেশি আদায় করছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পেঁয়াজের দাম কমাতে ব্যর্থ সরকার। সরকারি উদ্যোগের পরও পেঁয়াজের সরবরাহ পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। দাম এখনও সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব হলেও ব্যবসায়ীরা সরকারকে সাহায্য করছে না। দাম বাড়িয়ে তারা ভোক্তাদের পকেট থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং জোরদার করে পেঁয়াজের দাম ভোক্তা সহনীয় করতে হবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.