রিকশাচালক ফিরিয়ে দিলেন ২০ লাখ টাকা

একজন রিকশাচালকের সততা ও পুলিশের তাৎক্ষণিক তৎপরতার কারণে রিকশায় ফেলে যাওয়া ব্যাগভর্তি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেলেন ব্যবসায়ী রাজীবপ্রসাদ। শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা বাজারের সার ব্যবসায়ী রাজীবপ্রসাদ রিকশাচালক লাল মিয়ার রিকশায় নিজের ভুলে ফেলে যাওয়া একটি ব্যাগে ২০ লাখ টাকা ফেরত পান।

জানা গেছে, ব্যবসায়ী রাজীব শুক্রবার সকালে ২০ লাখ টাকা একটি ব্যাগে করে নিয়ে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা বাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাবার উদ্দেশে বাস ধরার জন্য সাতমাথা পর্যন্ত যেতে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা কালিবাড়ি মোড় থেকে রিকশায় ওঠেন। সাতমাথায় পৌঁছে বাস ধরার জন্য রিকশাভাড়া মিটিয়ে দিয়ে নেমে পড়েন। এ সময় তিনি ২০ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি ভুল করে রিকশায় ফেলে যান। কিছুক্ষণ পর ব্যাগটির কথা মনে হলেও ততক্ষণে রিকশাচালক সাতমাথা থেকে চলে যাওয়ায় রাজীব চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি দ্রুত বিষয়টি সদর থানা পুলিশকে জানান।

এদিকে রিকশাচালক লালমিয়া ব্যাগটি দেখতে পেয়ে ব্যাগের মালিককে খুঁজতে থাকেন।

পুলিশও ঘটনা জানার পরপরই তৎপর হয়ে ঐ এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে রিকশাচালক লাল মিয়াকে খুঁজে বের করেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ২০ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি রাজীবের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন জেলার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁইয়া। এসময় রিকশাচালক লাল মিয়াসহ বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসব এম বদিউজ্জামান এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রিকশাচালক লাল মিয়া পুলিশকে জানান, তিনি রিকশায় ফেলে যাওয়া ব্যাগটি তার নজরে আসার পর দেখেন অনেক টাকা। এরপর থেকেই টাকার মালিককে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন। কত টাকা আছে তা ‌তিনি জানেন না।

বগুড়া শহরের মালগ্ৰাম এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন লাল মিয়া। দিনে দুইশ টাকা ভাড়ায় নেয়া রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরের টাকায় তার ‌‌‌‌‌লোভ নেই বলে জানিয়ে বলেন, কষ্টের আয়ে আনন্দ আছে। মানুষের কষ্টের টাকা দিয়ে নিজের কষ্ট ‌‌‌‌‌দূর করা যায় না।

ব্যবসায়ী রাজীব টাকা ফেরত পাবার পর জানান, তিনি পুরো টাকা ব্যাগসহ ফেরত পেয়েছেন। একটি টাকার বান্ডিলও খোলা হয়নি। রিকশাচালকের এই সততায় মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। একইসাথে তিনি গরীব রিকশাচালককে সততার জন্য একটি নতুন রিকশা উপহার দেবার ঘোষণা দেন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম বদিউজ্জামান বিষয়টি জানার পরপরই টাকা উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন। এ সময় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে রিকশাচালককে শনাক্ত করা হয়। পরে অন্য রিকশাচালকের সহায়তায় লাল মিয়াকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়। রিকশাচালক সততার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.