মোদির ‘জাল চিঠি’ নিয়ে বাংলাদেশে খবর প্রকাশে দিল্লির ক্ষোভ

অনলাইন ডেস্ক:

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লেখা বলে দাবি করে একটি ‘জাল ও দুরভিসন্ধিমূলক’ চিঠির খবর বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ভারত তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

ওই কথিত ‘চিঠি’টিতে বলা হয়েছিল, অযোধ্যা বিতর্কে হিন্দুদের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি না কি ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও তার সহকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এমন কী ‘এই রায় হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে এবং ভারতের হিন্দুরা চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এই রায় মনে রাখবেন’ বলেও প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বাক্ষরিত’ ওই জাল চিঠিতে মন্তব্য করা হয়।

কিন্তু ‘সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য’ এই জাল চিঠিটিও বাংলাদেশের কয়েকটি অনলাইন সংবাদপত্র ও পোর্টাল যেভাবে রিপোর্ট করেছে ভারত তাতে রীতিমতো ‘বিস্মিত ও বিচলিত’ বোধ করেছে বলে দিল্লিতে শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বৃহস্পতিবার টুইট করেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যেই এই অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।

এর আগে ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের তরফ থেকেও একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, এই চিঠি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিদ্বেষপূর্ণ। এর উদ্দেশ্য বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা।

জনপরিসরে ভারত সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা ও ভুল তথ্য প্রচার করার এই অপচেষ্টা অত্যন্ত গর্হিত ও অনুচিত বলেও ওই বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়।

বিবিসি বাংলাকে ভারতীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, কথিত যে চিঠিটি নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত সেটি আসলে আমেরিকা থেকে টুইটারে পোস্ট করেছিলেন জনৈক পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি।

আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টার বাসিন্দা, তৈমুর সৈয়দ নামে ওই ব্যক্তি টুইটারে নিজের পরিচয় দেন এইভাবে – ‘ইমরান খান আমার নেতা’।

বাবরি মসজিদ-রামমন্দির বিতর্কে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার দিনতিনেক পর (১২ই নভেম্বর) তিনি টুইটারে একটি পোস্ট করেন।

সেখানে তিনি লেখেন, হিন্দুরাষ্ট্রের পক্ষে রায় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের প্রধান বিচারিপতি ও তার বেঞ্চকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানাচ্ছেন! ভাবা যায়!

তিনি নিজের পোস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদির লেখা কথিত চিঠিটির একটি ‘প্রতিলিপি’ও পোস্ট করেন।

যাতে দেখা যাচ্ছে, নিজের সরকারি লেটারহেডে লেখা ওই ‘চিঠি’তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও সাংবিধানিক বেঞ্চের আরও চারজন বিচারপতিকে অযোধ্যা মামলায় এক ‘স্মরণীয় রায়’ দেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

তবে কথিত ‘চিঠি’টির ভাষা ও ভঙ্গী থেকে এটাও মোটামুটি পরিষ্কার ছিল বাস্তবে ওই ধরনের কোনও চিঠি লেখা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভবই নয় – সম্ভবত তাকে ব্যঙ্গবিদ্রূপ করার উদ্দেশ্য নিয়েই চিঠিটি ওভাবে সাজানো হয়েছিল।

কিন্তু তা সত্ত্বেও পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টাতেই বাংলাদেশের বেশ কিছু পোর্টাল ও সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণে এই ‘চিঠি’র প্রসঙ্গ তুলে এরকম খবর পরিবেশন করা হয় যে প্রধানমন্ত্রী মোদি আসলেই ভারতের প্রধান বিচারপতিকে এ ধরনের একটি চিঠি লিখেছেন।

পুরো বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরই ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস এর কড়া নিন্দা করে বিবৃতি জারি করে।

কিন্তু তাতেই বিষয়টি থেমে থাকেনি, ভারত মনে করে দিল্লি থেকেও এর প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন। এরপরই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই ‘অপপ্রয়াসে’র বিরুদ্ধে টুইট করে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার কথায়, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টাতেই এই ‘ষড়যন্ত্র’ ছকা হয়েছিল বলে আমরা মনে করছি, আর তাই সেটা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।


সূত্র : বিবিসি বাংলা

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.