সংবাদ প্রকাশের পর নতুন বাড়ি পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী চার বোন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

সংবাদ প্রকাশের পর নতুন বাড়ি পাচ্ছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রতিবন্ধী সেই চার বোন। বছরের পর বছর ধরে বাঁশঝাড়ের নিচে ছোট্ট একটি খুপড়ি ঘরে বাস করা প্রতিবন্ধী চার বোনকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর তাদের জন্য বাড়ি করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন নাজমুল হুদা নামে প্রবাসী এক বাংলাদেশি। যত দ্রুত সম্ভব তিনি বাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে বাড়ির নকশাও তৈরি হয়ে গেছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী চার বোনের পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজের অনেক বিত্তবান লোক।

‘আমরা মরে গেলে ওদের কে দেখবে?’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে প্রতিবন্ধী চার বোনের কষ্টের জীবনের কথা তুলে ধরা হয়।

ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাইকানাই ইউনিয়নের চৌরঙ্গীরপাড় গ্রামের ইব্রাহীম আলীর পরিবারে জন্ম নেওয়া চার বোন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তারা হলেন পারভীন আক্তার (৩৫), বিউটি আক্তার (২০), তাপসি (১৫) এবং শাবনুর (১১)। এই চার বোন কেউই একাই নড়াচড়া করতে পারেন না।

বছরের পর বছর ধরে বাঁশঝাড়ের নিচে ২০ হাতের একটি খুপড়ি ঘরের বারান্দায় বসে থেকে বন্দিসময় কাটে প্রতিবন্ধী চার বোনের। প্রতিবন্ধী মেয়েদের নিয়ে বাবা-মাকে খুপড়ি ঘরেই কাটাতে হয় দিনরাত। এছাড়া ইব্রাহিমের স্ত্রী শামছুন্নারও অনেকটা মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই প্রতিবন্ধী চার বোনের প্রকৃতির কাজ থেকে শুরু করে খাওয়ানো পর্যন্ত সবই করতে হয় বাবা ইব্রাহীম আলীকে। চলাচল অক্ষম মেয়েদের প্রায় তিন যুগ ধরে তিল তিল করে বড় করেছেন ইব্রাহীম।

দুঃখে-কষ্টে জীবন কাটানো হতদরিদ্র ইব্রাহিম অনেকটা কষ্টে চার সন্তানকে আগলে রাখলেও তাদের অবর্তমানে সন্তানদের কে দেখবে সেই উদ্বেগে দিন কাটছে তার।

ইব্রাহীম জানান, তাদের সংসারে পাঁচ মেয়ে। প্রতিবন্ধী বড় মেয়ে পারভীন জন্মেছেন ৩৫ বছর আগে। এরপর একটি সুস্থ মেয়ে জন্ম নেয়। তারপর আরও তিনজন প্রতিবন্ধী মেয়ে জন্ম নেয় তাদের ঘরে।

ইব্রাহীমের পরিবারের এমন অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়া পরিবারটির দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির সম্পাদক আলী ইউসুফ এবং ফুলবাড়িয়া রাধাইকানা ইউনিয়নের প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করা আনোয়ারা করিম সমাজকল্যাণ সংস্থা এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি শামীমা আক্তার সুমি (কাব্য সুমি সরকার) প্রতিবন্ধী চার বোনের ছবিসহ তাদের স্ব স্ব ফেসবুকে একটি মানবিক পোস্ট করেন। এতে ব্যাপক সাড়া পড়ে।

পরে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজিয়েট স্কুলের ৯০ ব্যাচের ছাত্র সুশাসনের জন্য নাগরিক ময়মনসিংহ মহানগর কমিটির সম্পাদক আলী ইউসুফের বন্ধু লন্ডন প্রবাসী নাজমুল হুদা প্রতিবন্ধী চার বোনের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার কথা জানান। যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি টাকা পাঠাবেন বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে বাড়ি নির্মাণের নকশাও তৈরি হয়ে গেছে।

বাড়ি নির্মাণের জন্য প্রতিবন্ধী চার বোনের বাবা ইব্রাহীম, আলী ইউসুফ ও কাব্য সুমি সরকারের নামে কৃষি ব্যাংক ফুলবাড়িয়া শাখায় একটি যৌথ একাউন্ট খোলা হয়েছে। অসহায় মানুষ, পথ শিশু, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা নারী-বৃদ্ধ-শিশুর পাশে থাকায় গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নাম আসা ফুলপুরের ভাইটকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেকও প্রতিবন্ধী চার বোনের দূরবস্থার কথা শুনে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছেন।

অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মাহমুদা আক্তার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শিক্ষক মৌসুমী গুপ্তা, অগ্রণী ব্যাংক অফিসার্স ক্লাব, পাপড়ি নামে এক নারী, কলেজ শিক্ষক দিলরুবা শারমীনসহ আরও অনেকে তাদের সহযোগিতা করতে হাত বাড়িয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক আলী ইউসুফ জানান, প্রতিবন্ধী চার বোনের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসায় আমরা অভিভূত।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি কাব্য সুমি সরকার বলেন, সবার সহযোগিতায় আমরা আশা করছি পরিবারটির কষ্ট অচিরেই লাঘব হবে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা আশরাফুল আলম জানান, ‘ওরা খুবই কঠিন পরিবেশে বসবাস করছে। প্রতিবন্ধী এই পরিবারটির জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ প্রকল্প থেকে একটি ঘর করে দেয়া হবে।’

আশরাফুল আলম জানান, ‘এরই মধ্যে পরিবারটিকে দুই ব্যান্ডেল টিন ও ছয় হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। খুব শিগগির ওদের বাড়িতে একটি নলকূপ স্থাপন করা হবে।’

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.