- সিউর সাকসেস স্কুল এন্ড ক্যাডেট কোচিং এর অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত - October 19, 2024
- A large public meeting was held at Dhanbari on the initiative of BNPMd. - October 19, 2024
- BNP initiative in Dhanbari to pray for the souls of those martyred in the mass uprising - October 19, 2024
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শুরু থেকে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার বিপরীতে মিয়ানমার বারবার শঠতা আর উস্কানিমূলক আচরণ করে চলেছে। দেশটি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নানা টালবাহানার পাশাপাশি দেশে-বিদিশে মিথ্যাচারও করে যাচ্ছে সমানতালে। এখন খোদ ঢাকায় বসে মিথ্যাচারে নেমেছে দেশটি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবাদও তেমন তোয়াক্কা করছে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে তাদের আচরণে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের মিথ্যাচার আর শঠতা নতুন কিছু নয়। কদিন আগেও তারা বাংলাদেশের সেন্টমার্টিন দ্বীপকে তাদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তাই বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুধু কূটনৈতিকভাবে দেশটির ওপর আস্থা রাখা যায় না। মিয়ানমারের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়েও আন্তর্জাতিক প্রচার চালাতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাস গত ১১ দিনে দুবার মিথ্যাচার করেছে সামাজিক যোগোযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ২২ অক্টোবর তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ৪৬ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি করে দূতাবাস। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন এই তথ্যের প্রতিবাদ করার পরদিন গত শুক্রবার দূতাবাস আবার ফেসবুকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দাবি করে তারা আরও ১৭ রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। তাতে আরও দাবি করা হয়, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪১৪ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিয়েছে তারা।
কিন্তু গতকাল পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেওয়ার তথ্য নেই জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার কাছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন জানান, মিয়ানমারের দাবি পুরোই বানোয়াট।
গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘মিয়ানমার যে তথ্য দিচ্ছে সেটা বানোয়াট। প্রত্যেকটা রোহিঙ্গার তালিকা আমাদের কাছে আছে। আমাদের প্রত্যাবাসনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তরা জানিয়েছে একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি। তারা (মিয়ানমার) যে এই দাবি করছে সেটার প্রমাণ দেখাক, লিস্ট সবাইকে দেখাক।’
শুক্রবার মিয়ানমার ফেসবুকে যে ১৭ রোহিঙ্গাকে নিয়েছে বলে দাবি করেছে, সেখানে কারও নাম নেই। তাদের দাবি, এখন পর্যন্ত ৪১৪ রোহিঙ্গা শরণার্থী নিজেদের ইচ্ছায় টং পিও লেতে ও না খু ইয়া কেন্দ্র দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরেছেন। সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অভিবাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সবাইকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে কয়েকজন লোককে রোহিঙ্গা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হলেও তাদের মুখ অস্পষ্ট (ব্লার) করে দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমি আজকেও কক্সবাজারে থাকা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) অফিসারদের সাথে কথা বলেছি, তারা বলেছে একজনও যায়নি। ‘নট এ সিঙ্গেল ওয়ান’। তাদের এই মিথ্যাচারের তথ্য আমরা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করব।’
গত ২২ অক্টোবর ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসের ফেসবুক পোস্টে ৪৬ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবির পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তা নাকচ করে দেন। বলেন, মিয়ানমার তাদের সীমান্তের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকেই ফেরত নেয়নি এখনো।
বাংলাদেশের সঙ্গে সই করা দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে নিরাপদ, ঝামেলাহীন ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে মিয়ানমার সরকার তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে ঢাকার দূতাবাসের পোস্টে দাবি করা হয়।
অথচ জাতিসংঘসহ ইইউ দেশগুলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের আন্তরিকতা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের আয়োজন দেখতে দেওয়াতেও গড়িমসি করছে মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের রাখাইনে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছে দেশটি।
সর্বশেষ, শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মানবীয় মর্যাদা সমুন্নত রেখে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে মিয়ানমারকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানরা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নাজুক জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রোহিঙ্গা নিয়ে মিথ্যাচার করছে। সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনের সময় রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্ভট এক দাবি করে মিয়ানমার। ন্যামের মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলনে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী কিউ তিন বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল লোকের ঢল নেমেছিল মিয়ানমারে। কিউ তিন ধর্মীয় নিপীড়ন, জাতিগত নির্মূল অভিযান ও গণহত্যার মতো শব্দ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি বাংলাদেশ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছে বলে অভিযোগ করেন।
মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রীর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গত বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশটিকে সতর্ক করে দেয় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা কেন স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী হচ্ছে না, তার সঠিক কারণগুলো সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। মিথ্যাচার বন্ধ করে তাদের নিজেদের দায়িত্ব পালনে মনোযোগী হতে হবে।
তার এক দিন পরই মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস ফেসবুকে দাবি করে তারা ৪১৪ রোহিঙ্গাকে ইতিমধ্যে দেশে ফিরিয়ে নিয়েছে।
বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের ভিটেমাটিতে ফেরানোর ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা থেকেই মিয়ানমার অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার অভিযোগ করেছিল, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অসহযোগিতার কারণে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমিরের মতে, বারবার একই ধরনের মিথ্যাচার করা মিয়ানমারের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দেশটির এমন মিথ্যাচারের বিষয়ে বিশ্বকে জানাতে হবে। মিয়ানমারকে এ বিষয়ে সবাইকে নিয়ে চাপ দিতে হবে।’
রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঙালি আখ্যা দিয়ে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগ আছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের হত্যা-ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। তাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করেও নানা টালবাহানা করছে মিয়ানমার। এর মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে ২০১৭ সালের আগস্টে নতুন করে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের দমন-পীড়ন শুরুর পর। এর আগে থেকে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।
মিয়ানমার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই দফা চেষ্টা করেও রোহিঙ্গাদের কাউকে রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয় প্রক্রিয়া।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলেও বাংলাদেশের দেওয়া তালিকা নিচ্ছে। ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের দেওয়া ৫০ হাজার রোহিঙ্গার সবশেষ তালিকাটিও মিয়ানমার নিয়েছে। এ নিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় ১ লাখ ৬ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা নিয়েছে মিয়ানমার। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনের অধিবাসী বলে স্বীকার করেছে তারা। কিন্তু একজন রোহিঙ্গাকেও এখন র্পন্ত নেয়নি দেশটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘মিথ্যাচার করা মিয়ানমারের একটা ঐতিহ্য। কিন্তু মিথ্যাচার করলে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমাদের যেটা করতে হবে, ক্যামপেইন করে বিশ্বকে জানাতে হবে এদের মিথ্যাচারের বিষয়টি। রাষ্ট্র থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে নিয়ে এদের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করে চাপে ফেলতে হবে দেশটিকে।’
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.