হাত-পা বেঁধে সাংবাদিককে মারধর, ছাত্রলীগ নেতা আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার

সাভারের আশুলিয়ায় জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগের সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া এক সাংবাদিকসহ দুই জনকে বেঁধে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে থানা ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। আহতদের ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার আশুলিয়ার কুরগাঁও এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীউল আলম শামীম আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি।

জানা গেছে, এর আগেও ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের ঘটনায় মামলা করে এখনও পালিয়ে বেরাচ্ছেন এক ব্যবসায়ী।

মারধরের শিকার সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল ওয়াহিদ অভিযোগ করে বলেন, সকালে কুরগাঁও সোসাইটি প্রফেসর পাড়া এলাকার কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির জমি অবৈধভাবে দখলের সতত্যা জানতে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান তিনি। এ সময় আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম তাকে বাধা দেন। এক পর্যায়ে জমির মালিকের স্বজন ওবায়দুর রহমান ও আব্দুল্লাহকে জোরপূর্বক ব্যক্তিগত অফিসে নিয়ে যান শামীম। পরে সেখানে তাদের কোনো কথা না শুনেই হঠাৎ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও রূঢ় আচরণ করতে থাকেন শামীম।

এক পর্যায়ে রশি দিয়ে তাদের বেঁধে পাইপ ও লাঠি দিয়ে বেধরক পেটাতে থাকেন শামীমসহ তার সাত আটজন সঙ্গী। পরে কৌশলে ব্যাপারটি পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ সময় শামীমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

জমির মালিক ও গকুলনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কামরুল হাসান অভিযোগ বলেন, প্রফেসর পাড়া এলাকায় পৈতৃক ১৯.২৫ শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে তার পরিবার। কিন্তু গত ২-৩ মাস ধরে আশুলিয়া থানা ছাত্রলীগ সভাপতি শামীম তার ১০ শতাংশ জায়গা অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করছেন। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি আজ সাংবাদিক ও তার এক স্বজনকে ঘটনাস্থলে পাঠালে তাদের মারধর করে শামীম ও তার লোকজন।

এদিকে, সিদ্দিকুর রহমান নামে সেনওয়ালিয়া এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের ৪ জানুয়ারি তার ৯ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করতে ছাত্রলীগ নেতা শামীম ও তার সঙ্গী শহিদুল, এম.আর হাবিবুর রহমান (রবিন), ইমরান, রাসেল, সাগর, ডিপজল, লোকমানসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন তাকে অপহরণ করে। পরে তাকে ঢাকা হাউজিং সোসাইটি ও নফেল প্রজেক্টের ভেতরে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে দুই হাত-পা ও চোখ বেঁধে রড, হকিস্টিক দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায়। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার দুই পা ক্ষত বিক্ষত করে দেয় সন্ত্রাসীরা। এ সময় তিনি অচেতন হয়ে পড়লে মৃত ভেবে তাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যান শামীম ও তার বাহিনী। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও এখন পর্যন্ত কার পা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।

তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার পর ওই বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করলেও প্রাণের ভয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে অন্যত্র পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মারধরের ঘটনা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদ হাসান জানান, এক সাংবাদিকসহ দুই জনকে আটকে রেখে মারধরের খবরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। এ সময় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীমকেও থানায় নিয়ে আসা হয়। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত পূর্বক পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.