রোহিঙ্গা কন্যার কান ফোঁড়াতে এলাহি কারবার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা কন্যার কান ফোঁড়াতে এলাহি কারবার

উঠেছে এক কেজির বেশি স্বর্ণালঙ্কার, বিপুল পরিমাণ টাকা

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের গত ২২ আস্টের বিশাল সমাবেশ করা নিয়ে আলোচনা চলছে দেশজুড়ে। একই দিনে অন্য এক আয়োজনের খবর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এক রোহিঙ্গা নেতার কিশোরী কন্যার কান ফোঁড়ানো উপলক্ষে এলাহি আয়োজন হয়েছে কক্সবাজারে। যে আয়োজনে আসা অতিথিরা অন্যান্য উপহার বাদ দিয়ে এক কেজির মত স্বর্ণই দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। স্বর্ণ ছাড়া উপহার হিসেবে প্রায় নগদ টাকাও উঠেছে কয়েক লক্ষ।

সম্প্রতি টেকনাফের ‘দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত’ নূর মোহাম্মদের কিশোরী কন্যার কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা এভাবে উপহার নিয়ে আসেন। এলাকার মানুষের মুখে মুখে এখন এই কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানের খবর।

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার জানান, রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদের বাংলাদেশে চারটি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পাকা ভবন, একটি দুতলা, একটি টিনের ঘর এবং অপরটি বাগান বাড়ি। রোহিঙ্গারাই তাদের ‘ওস্তাদের’ কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এক কেজির মত স্বর্ণালংকার এবং সেই সঙ্গে নগদ টাকাসহ রীতিমত প্রতিযোগিতা করে উপহার সামগ্রী দিয়েছে। যে কারণেই এরকম অস্বাভাবিক পরিমাণে উপহার উঠেছে।

হত্যা, ডাকাতিসহ অসংখ্য মামলার ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ আসামি নূর মোহাম্মদ। তাকে গ্রেপ্তার করতে নানাভাবে চেষ্টা করলেও ধরতে পারছে না বলে পুলিশ। আলোচিত এই অপরাধী কিভাবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্নে এমন আয়োজন শেষ করলো তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

টেকনাফ থানার ওসি বলেন, ‘নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ অনেক মামলা রয়েছে এবং তিনি মোস্ট ওয়ান্টেড আসামি। কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এ রকম উপহার সামগ্রী উঠার বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছ থেকে জেনেছি। এ ঘটনার পর থেকে রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদকে ধরার জন্য কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তিনি তার বিশাল অস্ত্রধারী ডাকাত বাহিনী নিয়ে টেকনাফের গহীন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই তাকে ধরা যাচ্ছে না।’

অভিযোগ রয়েছে, নূর মোহাম্মদের ডাকাত বাহিনী অপহরণ, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই, মানবপাচার এবং সর্বশেষ সীমান্তের একচেটিয়া ইয়াবা চোরাকারবারও হাতে নেয়। ইতিমধ্যে দুই বছর আগে বাংলাদেশে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর নূর মোহাম্মদের ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।

এলাকার ৫-৬টি রোহিঙ্গা শিবির, টেকনাফের বিস্তৃত পাহাড়, সীমান্তের নাফ নদী ও নদীর ওপারের রাখাইনের অভ্যন্তরে থাকা ইয়াবা কারখানা ও গবাদি পশুর বাজারসহ একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নেয় ডাকাত দল। এসব কারণেই বাহিনীর সদস্যরা এখন বিপুল সম্পদের মালিক।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনই রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ তার কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এতে গরু-ছাগল জবাই করে আয়োজন করা হয় বড় ভোজ অনুষ্ঠানের। আমন্ত্রিতদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা ডাকাত, সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা ইয়াবা চোরাকারবারির দল।

পুলিশের তথ্য বলছে, ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ হ্নীলা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের জাদিমুরা এলাকায় এসে প্রথমে বাসা ভাড়া নেন। ধীরে ধীরে সেখানেই জমি কিনে বাড়ির মালিক হন। এ পাড়ে আশ্রয় নেওয়ার পর ওপারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি সীমান্তের বিশাল ডাকাত বাহিনী গড়ে তুলেন।

সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি জানান, এ রকম রাজকীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো ব্যাপার না। এখানে সবাই এখন ধনাঢ্য। অনেক রোহিঙ্গাই এবার ঈদুল আজহায় আড়াই লাখ টাকার বেশি মূল্যের গরু কোরবানিও দিয়েছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.