- The story of Idris Ali, a humanitarian police inspector of Dhanbari police station - October 19, 2024
- গণঅভ্যুত্থানে শাহাদৎ বরণকারীদের রুহের মাগফিরাত কামনা ধনবাড়ীতে বিএনপির উদ্যোগে - October 19, 2024
- কাজীপুর জবর দখলকৃত জমিতে রোপন করা ফসল নষ্ট করে উল্টো প্রকৃত জমির মালিককে ফাসানোর চেষ্টা - October 18, 2024
বোরহান উদ্দিন
এমন বাস্তবতায় কর্মস্থলে যোগদানের সাতমাসের মাথায় ৯০০-এর বেশি মামলা নিষ্পত্তি করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন ঝিনাইদহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. তাজুল ইসলাম।
গত জুলাই মাসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি। এরমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা এক লাখ সাড়ে ৬৪ হাজার। বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি বন্ধ ও অর্থনেতিক ক্ষতি থেকে মুক্তি দিতে বারবার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে এই বিচারকের উদ্যোগের প্রশংসা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মুখে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য সাবেক আইন সচিব আবু সালেহ মো. জহিরুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি অবশ্যই ভালো দিক। একজন দক্ষ অফিসারের এটিই প্রধান বৈশিষ্ট্য।’
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী নিম্ন আদালতের একজন বিচারকের মাসে ছয়টি করে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তি করতে হয়। আর ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে কোনো ধরা বাধা নিয়ম নেই বলে জানা গেছে।
কত মামলা নিষ্পত্তি
ঝিনাইদদ জেলা জজ আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে গত বছরের ২৫ নভেম্বর ২০১৮ যোগদান করেন বিচারক তাজুল ইসলাম। তিনি জেলার ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে (যুগ্ম জেলা জজ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম ঝিনাইদহে যোগদানের পর ৩ হাজারের বেশি ল্যান্ড সার্ভে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন তিনি। দায়িত্ব নেয়ার সময় তার এখতিয়ারে বিচারাধীন ল্যান্ড সার্ভে মামলাসহ মিস কেস ছিল ২৯৫৪টিরও বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারক মো. তাজুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র সাত মাসে ৯ শতাধিক মামলা নিষ্পত্তি করেন। যার মধ্যে ৩৮০টি মামলা ছিল পুরানো। যেগুলো ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালে দায়ের হওয়া। এগুলোকে তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তি করেন। এ সময় তাকে প্রায় এক হাজার সাক্ষীর সাক্ষ্য নিতে হয়। মিস মামলাতেও ২ শতাধিক সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য দেন। এ ছাড়া প্রায় ২০০টি নতুন মামলা ট্রাইব্যুনালে ইস্যু গঠন করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা রয়েছে যা তিনি দায়েরের মাত্র ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করেছেন। বিচারক তাজুল ইসলাম ইতোপূর্বে ঢাকা, মেহেরপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে চাকরি করেছেন।
এ ছাড়া আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মোকদ্দমা ফাইল তথা দাখিলের নয়মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করেছে। এমন আরও অনেক মামলা চার/পাঁচ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে।
জানা গেছে, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে সারা দেশে কোথাও স্টেনোগ্রাফার নেই। তা সত্ত্বেও ঠাকুরগাঁওয়ে ও মেহেরপুরের যুগ্ম জজ তাজুল ইসলাম নিজে টাইপ করে রায় লিখে ঘোষণা করছেন। রাত-অবধি তিনি বিচারিক কাজ করছেন।
নিজে উদ্যোগী হয়ে পুলিশের সহায়তায় মামলার সাক্ষীদের হাজির করে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিচ্ছেন। এসব কারণে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হচ্ছেন এই বিচারক।
জানতে চাইলে ঝিনাইদহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের এজিপি জনাবা দীল আফরোজ বলেন, এই আদালতের বিচারক সবসময়ই চেষ্টা করেন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে। তিনি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি বিচার কাজ করেন। অনেক সময় দেন। অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও তিনি কাজ করেন। ফলে আমাদের জেলা জজ আদালতে সবচেয়ে বেশি মামলা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হচ্ছেন তিনি।
ঝিনাইদহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের তথা জেলা জজ আদালতের জিপি সুবির কুমার সমাদ্দার ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের আদালতে সাক্ষীর উপস্থিতির হার ভালো। সাক্ষী গ্রহণ হয় ভালো। বিশেষ করে আমাদের বিচারকরা বেশ আন্তরিক। তারাও চেষ্টা করছেন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে। বিশেষ করে ঝিনাইদহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) তাজুল ইসলাম অত্যন্ত দক্ষ একজন বিচারক। তিনি অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করছেন। তিনি যে হারে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন তাকে রেকর্ড বলা যায়।
বিচারক যা বলছেন
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) তাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমার আদালতে সাক্ষী এলে ফেরত যায় না। আদালতের সময় শেষ হলেও সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়ে তাকে বিদায় দিই।
পুরাতন মামলার সাক্ষীদের আদালতে এনে সাক্ষ্য প্রদান করতে নিজে জিপি অফিসের মাধ্যমে ওই সংশ্লিষ্ট মামলার সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযাগ করে সাক্ষী আনার ব্যবস্থা করেন তিনি।
দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এই বিচারক বলেন, প্রত্যেক মামলার ধার্য তারিখ ওপেন এজলাসে ঘোষণা করি। রায় লেখাসহ প্রত্যেক দিনের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি মামলার নথি পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে দেখে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করি। এরপর এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করি। নতুন মামলা দায়ের হওয়ার পর পক্ষগণের ওপর নোটিশ জারি হওয়ার জন্য জোর তাগিদ দিই।
এ ছাড়া ঝিনাইদহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মামলার সাক্ষী হাজির করানোর জন্য সমন যথাযথ স্থানে পৌঁছেছে কি না তা প্রতিনিয়ত তদারকি করেন এই বিচারক।
তিনি বলেন, আমি রাত নয়টা পর্যন্ত অফিস করি। অনেক সময়ই বাসায় বসেও আদালতের কাজ করি। এ কারণে বেশি মামলার রায় দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
বিচারক তাজুল ইসলাম বলেন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমেই অনেক মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। সেটির ওপরই আমি বেশি জোর দিচ্ছি।’
সাবেক আইনমন্ত্রীর প্রশংস এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘আমি আইনমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তির জন্য এডিআর বা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিধান চালু করে দিয়েছি। সেটি হতে পারে দেশের মামলা জট নিরসনের সবচেয়ে প্রকৃষ্ট দিক। এটি ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রেও সম্ভব। আমি দেখেছি কানাডা ৯৫ শতাংশ মামলা বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। ঝিনাইদহের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক (যুগ্ম জেলা জজ) যেটা করে সফল।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.