- গণঅভ্যুত্থানে শাহাদৎ বরণকারীদের রুহের মাগফিরাত কামনা ধনবাড়ীতে বিএনপির উদ্যোগে - October 19, 2024
- কাজীপুর জবর দখলকৃত জমিতে রোপন করা ফসল নষ্ট করে উল্টো প্রকৃত জমির মালিককে ফাসানোর চেষ্টা - October 18, 2024
- ধনবাড়ীতে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা - October 18, 2024
উজান নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণে এবার লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর কুল ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। সপ্তাহ দুই আগে বন্যার পানি নেমে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘরে ফিরছে। ভেঙে যাওয়া বসত-বাড়ি মেরামত কাজ চলছে। কিন্তু তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন জমিতে লাগানো আমন ধানের চারাগুলো বালুতে ঢেকে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বন্যা এবার স্থায়ী হওয়ার কারণে আবাদি জমিতে পানি বেশি দিন জমে ছিল। তাই জমাট বাধা বালুর স্তর সরে না যাওয়ায় জমিতে লাগানো ধানের চারাগুলো বালুতে ঢেকে যায়। তিস্তা ও ধরলার বুকে বালু মিশ্রিত পলি জমতে জমতে নদীর বুক প্রায় সমতল হয়ে গেছে। ফলে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর কূল উপচে তীরবর্তী লোকালয়ের জমি তলিয়ে যায়। পানির সঙ্গে বিপুল বালুও চলে আসে। আর বালুতে ঢেকে যায় তাদের সোনার ফসল। ফলে কৃষক হয়ে যায় নিঃস্ব।
তিস্তা পাড়ের কৃষক জাকির হোসেন, মমতাজ উদ্দিন, আব্দুল জব্বারসহ অনেকেই ঢাকা টাইমসকে শোনান তাদের স্বপ্ন ভাঙার গল্প।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার মধ্য গড্ডিমারী গ্রামের মনছুর আলী বলেন, তিনি চার বিঘা জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে সাড়ে নয় হাজার টাকা। কিন্তু বন্যায় তিস্তা নদীর বালুতে ঢেকে গেছে তিন বিঘা জমির ধানের চারা। বন্যার পানির সঙ্গে বিপুল বালু এসে আবাদি জমিতে জমাট বেঁধেছে। পানি নেমে গেছে, কিন্তু নামেনি বালুগুলো।
তিনি জানান, বালুতে ঢেকে যাওয়া আবাদি জমিগুলোতে আর ফসল হবে না। তবে বালু সরাতে পারলে জমিগুলো আবাদযোগ্য হবে। আর এই কাজ খুব কষ্টকর। তবুও চেষ্টা করা হচ্ছে কোদাল দিয়ে বালুগুলো সরাতে।
হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের সির্ন্দুনা গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালের বন্যায় তার পাঁচ বিঘা জমিতে বালুর স্তর জমে ছিল। আজো সেগুলো আবাদযোগ্য হয়নি। এ বছরেও বন্যার পানিতে বয়ে আসা বালুতে ঢেকে গেছে আরও দুই বিঘা আবাদি জমি। আবাদি জমির উপর বন্যার পানি স্থায়ী হলেই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়।
উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী সির্ন্দুনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরল আমিন বলেন, বন্যার সময় আবাদি জমির উপর বালুর স্তর জমা আর পরবর্তীতে জমিগুলো অনাবাদি হওয়া নদী এলাকার বড় সমস্যা। এই ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে কয়েক শত বিঘা জমি বালুতে ঢেকে গেছে। এসব জমি অনাবাদি হয়ে প্রান্তরজুড়ে মাঠের পর মাঠ বালু চরে পরিণত হয়েছে। আর জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে নিঃস্ব হয়ে গেছে তিস্তা পাড়ের পাঁচ শতাধিক কৃষক।
লালমনিরহাট কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু ভুষণ রায় জানান, বন্যার পানির সঙ্গে নদীর বালু এসে মাঠের পর মাঠ আবাদি জমিকে অনাবাদি করেছে, যার সঠিক কোনো হিসাব নেই। তবে এ বছরের বন্যা স্থায়ী হওয়ায় নদীর তীরবর্তী বিপুল আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম বলেন, নিয়মিত তিস্তা ও ধরলা নদী খনন ছাড়া এ সমস্যা থেকেই যাবে। তবে তিস্তা নদী খনন ও তীর সংরক্ষণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং চলতি অর্থ বছরে তা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে বলেও তিনি জানান।