গান গেয়ে সেলেব্রিটি, ১০ বছর পর মা রাণুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন মেয়ে

0

গান গেয়ে সেলেব্রিটি, ১০ বছর পর মা রাণুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন মেয়ে

 নিজসাব প্রতিবেদন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার রাণাঘাট স্টেশনে বসে রাণু মণ্ডলের গান এর মধ্যে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ দেখে ফেলেছেন৷ এখন তিনি রীতিমতো সেলেব্রিটি৷ গান গাওয়ার জন্য ডাক আসছে বিভিন্ন জায়গা থেকে৷ কেরলে অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার জন্য তাঁকে বিমানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ফোন এসেছে৷ ফোন এসেছে মুম্বইয়ের এক রিয়েলিটি শোয়ের তরফেও৷

জানা গেছে, এক বছর দু’বছর নয়! দীর্ঘ ১০টি বছর ধরে মা রাণু আপন খেয়ালে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। ইচ্ছা হলে কোনও দিন রাতে বাড়ি ফেরেন। আবার, কোনও কোনও দিন ঘরের বাইরেই কেটে যায়। কোনও ভাবে লোকজনের থেকে চেয়ে চিন্তে চালাচ্ছেন জীবন। তবে চাহিদা খুব সামান্যই। দশ-কুড়ি টাকা।

ঘরে একা-একা ভাল না লাগলে রাণু চলে যান রানাঘাট স্টেশনে। গান করেন। তাঁর পাশ দিয়ে চলে যান ব্যস্ত ট্রেনযাত্রীরা। কেউ আবার গান শুনে থমকে দাঁড়ান। রাণুর গান থামে না। এই সবের মধ্যেই দুঃখ একটাই সন্তান পাশে নেই৷ রাণু বলেন, ‘‘মেয়ে হাতে দুশো টাকা দিয়ে সরে যায়, আর আসেনি৷

এদিকে এরইমধ্যে রাণুর সেলেব্রেটি হওয়ার খবর পেয়ে যায় তার একমাত্র মেয়েটি। শনিবার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়ে মেয়ে জানিয়েছিলেন, খুব শিগগির মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সাথী রায় বেগোপাড়ার বাড়িতে এসে দেখা করে গেলেন রাণু মারিয়া মণ্ডলের সঙ্গে।

রবিবার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বীরভূমের সিউড়ি থেকে রানাঘাট বেগোপাড়ায় বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি। প্রথমে সাথী ওই এলাকার অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। তারপর এসে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন।

এদিন মা-মেয়ের দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয়। এরই মাঝে এলাকার মানুষজনের সঙ্গেও কথা বলেছেন সাথী। এতদিন মায়ের পাশে থাকার জন্য তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

এদিন মেয়েকে এত দিন পর দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে যান রাণু। দেখা মাত্রই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। ছলছল চোখে রাণু জানতে চান, ‘‘তুই কেমন আছিস? বাড়ির সবাই কেমন আছে?’’

প্রতিবেশিরা জানাচ্ছেন, প্রায় বছর দশেক পর দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গেল এই বাড়িতে। শুধু এত দিন পরে দেখা হওয়াই নয়, রবিবার মা-মেয়ে এক সঙ্গে গানও গেয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা অমিতা মণ্ডল বলেন, “এ দিন প্রথম রাণুদির মেয়েকে দেখলাম। গত কয়েক দিন থেকে শুনছি রাণুদি ভাল গান করেন। আজ দেখলাম ওঁর মেয়েও গলাও খুব ভাল। মা-মেয়ে যখন এক সঙ্গে বসে গান গাইছিল, দেখে খুব ভাল লাগল।”

সাথী জানান, এ দিন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পেরে তাঁর খুবই ভাল লেগেছে। তিনি বলেন, ‘‘ভাষায় বোঝাতে পারব না! যত দূর মনে পড়ছে, আট-দশ বছর পর মায়ের সঙ্গে দেখা হল।’’

এত দিন পরে কেন দেখা করতে এলেন সাথী? এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁর জবাব, ‘‘এলাকার মানুষ জনের কাছ থেকে মায়ের গানের বিষয়ে খবর পেলাম। শুনলাম, মায়ের গানের ভিডিও খুব প্রশংসা পেয়েছে। তাই দেখা করতে এসেছি।”

একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সাঁইথিয়ায় তাঁর বিয়ে হয়েছিল। বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর তিনি এখন সিউড়িতে থাকেন। একটি ছোট মুদির দোকান চালান সাথী। ছোট ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন ভাবে এত দিন ব্যাতিব্যস্ত ছিলেন। তাই মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়নি।

প্রতিবেশী তপন দাসের ফোনেই শনিবার কথা হয় মা-মেয়ের। তিনি বলেন, “মায়ের সঙ্গে মেয়ের দেখা করাতে অনেক চেষ্টা করেছিলাম। আজ সার্থক হয়েছি। সাথী আজ এখানেই থাকবেন।’’ তপন আরও জানিয়েছেন, রাণুর কোনও সরকারি পরিচয়পত্র নেই। সেই বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে সাথীকে সঙ্গে নিয়েই যাবেন।

Leave A Reply