Latest posts by সম্পাদনা: এস.এম আব্দুর রাজ্জাক (see all)
- কাজীপুর জবর দখলকৃত জমিতে রোপন করা ফসল নষ্ট করে উল্টো প্রকৃত জমির মালিককে ফাসানোর চেষ্টা - October 18, 2024
- ধনবাড়ীতে ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা - October 18, 2024
- ঢাঙ্গীপুকুর আদর্শ গ্রাম নূরানী মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তরের শুভ উদ্বোধন - October 18, 2024
স্বাধীন বাংলা নিউজ টিভি রিপোর্টার মোঃতপছিল হাছানঃচাঁদপুর মতলব দক্ষিণ থানা ইনচার্জ এ কে এম এস মোঃ ইকবাল হোসেন,সাংবাদিকদের উপস্থিতে অবিভাবকের সন্তানের পতি কি ধরনের আচার-আচরণ ব্যাখ্যা দিলেন,মাদক দেহে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুল দরিলেন।
যে সমাস্ত মাদক সেবনের পরপরই ব্যক্তির মস্তিষ্কের কিছু কিছু জায়গায় অতি দ্রুত এবং বেশি পরিমাণে ডোপামিন নামক নিওরোট্রান্সমিটার বৃদ্ধি পায়,যা একজন ব্যক্তিকে মাদকের আনন্দ দেয়। এবং পরবর্তী কালে ব্যবহারে উৎসাহিত করে। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ধরে মাদকে আসক্ত তাদের বেলায় আবার উল্টোটা দেখা যায়। অর্থাৎ দীর্ঘদিন মাদক নেয়ার ফলে যে ডোপামিন একজন মানুষকে নেশার আনন্দ দিত তা আস্তে আস্তে কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
প্রকৃতপক্ষে দেখা যাচ্ছে, মাদকাসক্ত ব্যক্তি আসলে একটা সময়ে আর আনন্দের জন্য নেশা নিচ্ছে না। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয় এবং এটা থেকে একসময় বের হয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে। প্রথম পর্যায়ে মাদক মানুষকে এমন একটি আনন্দ দেয় যার কাছে মজাদার জিনিসগুলো যেমন খাদ্য , পানীয় এবং যোন মিলনের আনন্দের মত জিনিসগুলো ম্লান হয়ে পড়ে। কারণ এই ছোট ছোট আনন্দগুলো মানুষ একই ডোম পান এর মাধ্যমে পেয়ে থাকে। মাদকের আনন্দের সাথে পাল্লা দিয়ে এই আনন্দগুলো কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং মাদকই হয়ে পড়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তির একমাত্র চিন্তা চেতনা।
দীর্ঘদিনের যে মাদক ব্যবহার কারীদের ডোম পান এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কের যে সমস্ত জায়গা ডোপামিন এর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে সেই জায়গাগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মাদক গ্রহণের পরিমাণের ভিন্নতার কারণে দেহে ও মস্তিষ্কে এর প্রভাব ভিন্ন হয়। খুব অল্প পরিমাণে মাদক উদ্দীপক বস্তু হিসেবে কাজ করে। বেশি পরিমাণে মাদক গ্রহণ করা হলে তা যন্ত্রণাদায়ক হিসেবে কাজ করে। বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে যার পরিণতি হয় মৃত্যু ।
কিছু কিছু মাদক দ্রব্য সরাসরি মনকে আক্রমণ করে।এতে করে মাদক গ্রহণকারী তার চারপাশে কি ঘটছে তার উপলব্ধি হারিয়ে ফেলে। মাদক একজন ব্যক্তির সকল ইন্দ্রীয় চেতনাকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। যার ফলে ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারেনা। তার চিন্তাধারা নেতিবাচক হয়ে পড়ে ।১) মাদকাসক্তির বড় কারণ হলো মাদকের সহজলভ্যতা।২)বন্ধুদের চাপে পড়ে অনেকে মাদক নিয়ে থাকে।৩) বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে।(৪) অনেকের মাঝে মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা থাকে যা তাকে ঠেলে দেয় মাদকের জগতে।(৫) মানসিক সমস্যা যেমন: হতাশা, একাকীত্ববোধ, বিষণ্ণতার কারণে এসব থেকে রেহাই পেতে মাদককে বেছে নেয়।(৬) এন্টি সোশ্যাল পারসোনালাটি, শৈশবে বিকাশে সমস্যা থাকলেও অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে(৭) পারিবারিক কারণেও অনেকে মাদকে জড়িয়ে পড়ে।(৮) পারিবারিক কোলাহলে কারণে অনেক সময় মাদকে আসক্ত হয়ে থাকে।(৯) সহপাঠীদের চাপে পরে অনেকে মাদক নিয়ে থাকে।
মাদকাসক্ত কিনা বোঝার পদ্ধতিসম্পাদনা,শারীরিক লক্ষণসম্পাদনা,মাদক গ্রহণের ফলে একজন ব্যক্তির মাঝে বিরাট শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তন হয়।সেই পরিবর্তনগুলো একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন আপনার পরিবার মাদক নিচ্ছে কি না।(১) খাওয়ার প্রবণতা এবং ঘুমের সময়সীমার পরিবর্তন চলে আসলে। ওজন হঠাৎ করে বেড়ে গেলে বা কমে গেলে।(২) চোখ লাল হয়ে থাকলে এবং চোখের মণি স্বাভাবিকের চেয়ে বড় বা ছোট দেখালে।(৩) নাক দিয়ে প্রায়ই রক্ত পড়লে। সাধারণত কোকেইন বা নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করতে হয় এমন মাদকের বেলায় এই লক্ষণ দেখা যায়।(৪) চেহারা এবং পোশাকের পরিধান ও যত্নে অবনতি দেখা দিলে।(৫) শরীরে এমন কোন ক্ষত বা কাটা ছেড়া দেখা গেলে যা সম্পর্কে তারা জানে না বা কীভাবে আঘাত পেলো তা আপনাকে বলতে না চাইলে(৬) তাদের মুখে বা শরীরে বা পোষাকে অদ্ভুত বা অপরিচিত কোন গন্ধ পেলে।(৭) মাদকাসক্ত ব্যক্তির চেহারায় কালো ছোপ ছোপ দাগ তৈরি হয় (১) যৌন ক্রিয়ায় অনীহা বা ক্ষমতা হ্রাস পেলেন(২) ক্লাস বা অফিসে ঘনঘন যেতে না চাওয়া বা প্রতিষ্ঠানে কোন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া ।(৩) কাজে অমনযোগী হলে, ব্যক্তিগত শখ বা খেলাধুলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললে,(৪) তার সহকর্মী, শিক্ষক বা বন্ধুদের কাছ থেকে ঘনঘন নালিশ আসতে থাকলে ।(৫) বাসায় রাখা টাকার হিসাব না মিললে। কারণ নেশার দ্রব্য কিনতে টাকা লাগে। তাই সাধারণত নেশার দ্রব্যের মুল্য পরিশোধের জন্য আপনার সন্তান টাকা , মুল্যবান সামগ্রী, অলংকার চুরি করতে পারে ।
(৬) পড়াশোনার নাম করে ঘনঘন টাকা চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে ।(৭) পরিবাররে সদ্যসদের সাথে ব্যবহারের পরিবর্তন আসলে। সাধারণত মাদকাসক্তির সময়গুলোতে তারা খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকে।(৮) বেশিরভাগ সময়ই একা থাকলে বা প্রাইভেসি সচেতন হয়ে পড়লে। বেশির ভাগ সময়ই রুমের দরজা বন্ধ রাখলে।(৯) অকারণে বিরক্তিবোধ করলে,(১০) অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে আরম্ভ করলে।
(১১) পুরনো বন্ধুদের পরিবর্তে নতুন নতুন বন্ধু চোখে পড়লে,(১২) ঘরে বা বিছানায় পাউডার জাতীয় জিনিস পাওয়া,(১৩) প্রায়ই কারো না কারো সাথে মারামারি বা ঝগড়া ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়া।(১৪) সব সময় রুমে এবং শরীরে পারফিউম বা এয়ারফ্রেশনার ব্যবহার করা।(১৫) চোখের লাল ভাব কাটানোর জন্য ড্রপ ব্যবহার শুরু করলে ।(১৬) অকারণে রেগে গেলে।আপনার পরিবারের কারো মাঝে এধরনের শারীরিক ও আচরণগত পরিবর্তনের কয়েকটি লক্ষণ একসাথে থাকলে বুঝে নিবেন নিঃসন্দেহে সে একজন মাদকাসক্ত।মাদকাসক্ত নির্ণয়ের জন্য সাধারণত রক্ত পরীক্ষা,মূত্র পরিক্ষা এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তির চুল ও মুখের লালা পরীক্ষা করা হয় ।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি কখনোই তার মাদক গ্রহণের ব্যাপারটি স্বীকার করবে না। এমনকি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাতেও সে নানা উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করে থাকে। সাধারণত সরকারি বা বেসরকারিভাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপ্লোয়িদের মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত কি না তা নির্ণয়ের জন্য যখন পরীক্ষা করা হয় সেক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি নানান উপায়ে ড্রাগস টেস্ট থেকে উতরে ওঠার চেষ্টা করে। সে বিভিন্ন উপায় অবলম্বণ করে থাকে।
(১) মুত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরীক্ষার প্রায় তিন চার ঘন্টা আগে প্রচুর পানি পান করে থাকে এবং যতবার সম্ভব মুত্র ত্যাগ করে থাকে। এতে ইউরিনে বিদ্যমান মাদক শরীর থেকে বের হয়ে পড়ে।আবার অনেক ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার নিজ্বস ইউরিন সরবরাহ না করে লিকুইড বা সিনথেটিক ইউরিন সরবরাহ করে থাকে যা কেমিক্যাল বাজারে পাওয়া যায়। অনেক সময় নিয়োগের ক্ষেত্রে মাদক নির্ণয় পরীক্ষায় নির্দিষ্ট মাদক দ্রব্যের উপস্থিতি আছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি যদি আগে থেকেই জানতে পারে কোন মাদকদ্রব্যের পরীক্ষা করা হবে সেক্ষেত্রে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আবার অনেকে নিজ মুত্রে রাসায়নিক বস্তু ব্যবহার করে মুত্র ভেজাল করে থাকে যেন ইউরিনে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া না যায়।(২) মাদকের উপস্থিতি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সন্দেহ ভাজন ব্যক্তির চুল কেটে নেওয়া হয়। এবং চুল সাধারণত ১.৫ ইঞ্চি কেটে নেওয়া হয় মাথার সামনে অথবা পেছন থেকে। এই পরীক্ষায় পাশ হবার জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তি তার চুল কেটে ছোট করতে পারেন। ফলে পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত চুল পাওয়া না গেলে বুক অথবা হাত থেকে লোম নেয়া হয় । সেক্ষেত্রে চুলের ফলিকলে মাদক ধরা পড়ে না। এছাড়াও কিছু কিছু মাদক রয়েছে যার ব্যবহারে কতদিন পর্যন্ত ফলিকলে বিদ্যমান থাকে তা জানা থাকলে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব হয়। আবার পরীক্ষার আগে চুল যদি হোয়াইট ভিনেগার , স্যালিসাইলিক এসিড , অয়াশিং পাউডার দিয়ে ধোয়া হয় তবে ফলিকলে মাদকের উপস্থিতি পাওয়া সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে বাজারে বিশেষ ধরণের শ্যাম্পু পাওয়া যায় যা দ্বারা চুল ধোয়া হলে চুলের ফলিকলে মাদকের উপস্থিতি বোঝা যায় না ।(৩) মাদক পরীক্ষার আর একটি মাধ্যম হলো মুখের লালা পরীক্ষা করা । এই পরীক্ষায় উতরে ওঠার বিশেষ কোন পদ্ধতি নেই। যদি না পরীক্ষার আধ ঘন্টা আগে মাদকাসক্ত ব্যক্তি স্পাইসি খাবার খেয়ে থাকেন অথবা মাউথ অয়াশ ব্যবহার করে থাকেন।(৪) রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তেমন কোন বিশেষ পদ্ধতি নেই তবে মাদকাসক্ত ব্যক্তি পরীক্ষার কিছুদিন আগে এস্পিরিন গ্রহণ করলে পরীক্ষায় উতরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে ।
মাদকাসক্ত ব্যক্তি সবসময়ই চাইবে মাদক নির্ণয় পরীক্ষা থাকে উতরে জন্য সেক্ষত্রে যে বা যারা পরীক্ষা করবেন তাদেরকে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাদকাসক্ত ব্যক্তি কোন অনৈতিক পন্থা অবলম্বণ না করে।মাদক গ্রহণের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বড় প্রভাব পড়ে। এছাড়াও শরীরে উপর কার্যকর প্রভাব ফেলে। মাদক গ্রহণকারীরা একাধিক ব্যক্তি একই সিরিঞ্জ ব্যবহার করার ফলে এইডস হওয়ার আশংকা থাকে। আবার হেপাটাইটিস, ফুসফুসে ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, জন্ডিস, মস্তিষ্কে ও মেরুদন্ডে রোগ হতে পারে।
সন্তান তার পরিবারের পরিবেশ দ্বারা অনেক প্রভাবিত হয়।তাই পারিবারিক পরিবেশ হতে হবে ধূমপান মুক্ত। সন্তানদের কার্যকলাপ ও সঙ্গীদের ব্যাপারে খবর রাখতে হবে। সন্তানরা যেসব জায়গায় যাওয়া আসা করে সে জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।সন্তানদের সাথে খোলামেলা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। যাতে তারাই নিজ থেকে তাদের বন্ধুবান্ধব ও কার্যাবলী সম্পরকে আলোচনা করে ।ধৈর্য ধরে তাদের সব কথা শুনতে হবে।পরিবারের সকল সদ্যসদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। সন্তানদের মাঝে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করতে হবে। পিতামাতার গুড প্যারেন্টিং বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
মাদকাসক্ত হয়ে গেলে পরিবাররে প্রতিটি সদ্যসকে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে সেই অবস্থা থেকে বের করে আনার সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে।প্রয়োজনে,পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
সন্তান মাদকাসক্ত থেকে সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসলে পুনরায় যেন মাদকে জড়িয়ে না পড়ে পিতামাতাকে সর্বদা সচেতন থাকতে হবে,সন্তানদের জন্য নির্মল পরিবেশ তৈরি করতে হবে ।চিকিৎসকদের সকল পরামর্শ অনুযায়ী সন্তানকে লালন পালন করতে হবে।প্রত্যেক পিতামতাই চায় তাঁর সন্তানের সুস্থ্য ও সুন্দর জীবন ।সেজন্য পিতামাতাকে বুঝে নিতে তাঁর সন্তানের জন্য কোনটি সঠিক,কোনটি ভুল।