বান্দরবানে খিয়াং সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসব উদ্যাপন

0
মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির শুভ নবান্ন উৎসব-১৪২৫ উদ্যাপন উপলক্ষে “ব্যুাই প্য: খিয়াংদের নবান্ন উৎসবের সোনালী অতীত” এই প্রবন্ধ কে সামনে রেখে শনিবার সকালে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের যৌথ আয়োজনে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউটের পরিচালক মং নু চিং এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বান্দরবান পর্বাত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও কনভেনিং কমিটির আহŸায়ক সিং ইয়ং ম্রো।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান এনজিও গ্রাউস উপদেষ্টা মং চিং প্রæ মার্মা। অনুষ্ঠানে সঞ্চলানা করেন বান্দরবানের বিশিষ্ট সাংবাদিক লেখক মুনিরুল ইসলাম মনু। অনুষ্ঠানে আলোচক ও রিসোর্স পার্সন হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সাংস্কৃতিক কর্মী গাব্রিয়েল ত্রিপুরা, বান্দরবান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আমিনুল ইসলাম প্রামানিক, শিক্ষক দিলীপ কুমার নাথ, বম সম্প্রদায়ের নেতা জুয়ামলিয়াম বম, প্রথম আলো প্রতিনধি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা, ভোরের কাগজ প্রতিনিধি মংসা নু মারমা প্রমুখ।

এসময় বক্তারা বলেন প্রতিবছর নতুন দিনের ফসল ঘরে তোলা আর সৃষ্টিকর্তার উদেশ্যে প্রদান করতেই এই নবান্ন উদযাপন করে পাহাড়ে বসবাসকারী সম্প্রদায়। প্রতিবছর জুম চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফলের চাষ করে সবাই লাভবান হতে পারে। এসময় বক্তারা বলেন, নতুন ধানের পিঠামেলা, জুমের ফসল উৎসর্গ, প্রার্থনা ও নবান্নের নানা পরিবেশনার সাথে খিয়াং সম্প্রদায় সহ অন্যান্য সম্পদ্রায় গুলো ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলে। নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর নবান্নের সময় সৃষ্টিকর্তার উদ্দ্যেশ্যে জুমে উৎপাদিত নতুন ধান, মারফা, চিনার, মিষ্টিকুমড়াসহ নানা ফল সৃষ্টিকর্তাকে প্রদান করে তবেই তারা তা ভোগ করে। বক্তারা পাহাড়ে সকল সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশা করেন।
ব্যুটাহ্  প্যহ: খিয়াং দের নবান্ন উৎসবের সোনালি অতীত-ক্য সা মং খিয়াং এর প্রবন্ধকার উল্লেখ করেন এই ভাবে খিয়াং বাংলাদেশের অন্যতম ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অংশ। এই জনগোষ্ঠীর মূল পরিচয় হ্যাওছ এই নামেই তারা পরিচিত। খিয়াং জাতির এই উপমহাদেশের এক প্রাচীন জাতি। খিয়াং জনগোষ্ঠী বাংলাদেশ পার্বত্য  চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই পার্বত্য জেলা রাঙগামাটি ও বান্দরবান এলাকায় তাদের বসবাস। পার্বত্য চট্টগ্রাম দুই পার্বত্য জেলা খিয়াংদের বসবাস হলেও এই জাতির মূল অংশ বর্তমানে পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারের  আরাকান প্রদেশের; সেখানে খিয়াংদের জনবসতি আছে বলে জানা যায়। অতীতে খিয়াংদের নিজস্ব বর্ণমালা কিংবা ওই জাতীয় লিখিত পুস্তক না থাকায় খিয়াং জাতির ইতিবৃত্ত সম্পর্কে তেমন কোন প্রমান বা তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন লেখক ও গবেষক খিয়াংদের সম্পর্কের নানান মত দিয়েছেন। আর এদিকে বংশপরমপরায় জনশ্রæতি হয়ে আসা এই জাতি সম্পর্কে তাদের নিঃস্ব মতও রয়েছে। এগুলো মধ্যে কোন কোনটা কিংবদন্তি নির্ভর; আবার কোনটা তথ্য যুক্তি নির্ভর নয়। ফলে আলো-আঁধারি পথে তাঁদের অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। তাই তাদের ইতিহাস পুরোপুরি সপষ্ট নয়। কথিত আছে, বর্তমানে খিয়াং জাতির সামগ্রিক অবস্থা খুব প্রান্তিক  হলেও এককালে এই জাতি এক পরাক্রমশালী জাতি হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম ‘মুয়্যু’ নামক রাষ্ট প্রতিষ্ঠা করে।

Leave A Reply