ইস্টার সানডে যীশুর পূনরুত্থান দিবস পালিত

0

মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম: বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:

রবিবার সারাদিন বিশেষ প্রার্থনানুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালিত হলো বান্দরবানে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে যীশুর পূনরুত্থান দিবস।
বম সম্প্রদায়ের সকলেই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। তারা প্রভূ যীশুর ভক্ত।  মহা ভাবগাম্ভীর্য্যের মধ্য দিয়ে ইস্টার সানডে যীশুর পূনরুত্থান দিবস পালন করে থাকে।
বড়দিনের পরেই ইস্টার সানডে একটি বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান মনে করা হয়।
এ বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠানে ফারুক পাড়া গীর্জায় উপস্থিত ছিলেন লালজাই নুয়াম বম, লাল কুম সাং বম, ভারসন পার বম, জেসমিন পার বম, খ্রিষ্টপার বম, চ্যাম্পিয়ান বম, জিংরেম কিম বম, লাল থান মই বম, ভান থার কিম বম, লমনি কিম বম, বোয়াংনুন পার বম,  জিংলম পার বম, অলিভ ডিক বম, ভান জির পার পপি বম, মেলোরি বম, লাল তেøম জুয়াল বম, দিলীময় বম, জিংথার সিয়াম বম, লালথা জুয়াল বম সহ আরো অনেকে।
 সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন।
খ্রিষ্ট ধর্মমতে, গুড ফ্রাইডেতে বিপথগামী ইহুদিরা যিশুখ্রিষ্টকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছিল। মানব জাতির পরিত্রাণের জন্য যিশুখ্রিষ্ট ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ৩ দিন পর অর্থাৎ রবিবার পুনরুত্থিত হন। যিশুখ্রিষ্টের এই পুনরুত্থানের সংবাদ খ্রিষ্টবিশ্বাসীদের জন্য খুবই আনন্দের এবং তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনটিকে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা ইস্টার সানডে হিসেবে পালন করে থাকে।
দিনটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃত্য পালন করা হয়। তবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বিভক্তির সঙ্গে সঙ্গে দিবসটি পালনেও ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- ক্যাথলিকরা এর আগের চল্লিশ দিন উপবাস পালন, অনুতাপ ও প্রার্থনা করে থাকেন। যীশুর চল্লিশ দিনের উপবাস অনুসারেই এ উপবাস পালন করা হয়। মানুষের আধ্যাত্মিক মঙ্গল সাধনের জন্য এ চল্লিশ দিনের উপবাস, প্রার্থনা, ত্যাগ স্বীকার, প্রায়শ্চিত্ত ও অনুতাপের মধ্য দিয়ে জীবনকে মূল্যায়ন করা হয়। প্রায়শ্চিত্তকাল হল আত্মশুদ্ধির সময়। অর্থাৎ যীশুর পুনরুত্থানের জন্য নিজের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি নেওয়ার সময়।
অন্যভাবে, যীশুর ক্রুশীয় মৃত্যু ও যাতনার কথা স্মরণ করে নিজের অন্তরে অনুতপ্ত হওয়া আর শুদ্ধ হয়ে ওঠার চূড়ান্ত সময়। তবে প্রট্যোস্টানরা উপবাস পালন করেন না। তাদের মতে, এ চল্লিশ দিনের শেষ সপ্তাহকে বলায় পবিত্র সপ্তাহ। এর মধ্যে পড়ে ইস্টার ট্রিডুম, হলি ট্রাসডে, শেষভোজ, পা ধৌতকরণ ও সর্বোপরি গুড ফ্রাইডে।
প্রচলিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ইস্টারের তারিখ নির্ধারিত হয় না। তাই কখনও কখনও পৃথিবীর পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে এটি আলাদা তারিখে পালিত হয়। প্রথমদিকের খ্রিস্টন, ইহুদি ও জেন্টাইলরা যে হিব্রু ক্যালেন্ডার অনুসরণ করত, তাতে খ্রিষ্টানদের কোনো বার্ষিক উৎসবের প্রমাণ নেই। দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এসে ইস্টার উদযাপনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩২৫ সালের রোমের ফার্স্ট কাউন্সিল অব নিচেয়াতে ইস্টার পালনের দিন নির্ধারিত হয়। এতে বলা হয়, মার্চের একুনিক্স (এ দিন দিন-রাত সমান থাকে) অনুসারে পূর্ণ চন্দ্রের (শেষভোজের দিন) পরের প্রথম রোববার হলো ইস্টার সানডে। পশ্চিমাঞ্চলে সাধারণত ইস্টারের সময় ২২ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে, পূর্বাঞ্চলের খ্রিস্টানরা নির্ভর করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের ওপর। এখানে সাধারণত ৪ এপ্রিল থেকে ৮ মের মধ্যে দিনটি পড়ে।
দিনটির সঙ্গে ইহুদিদের পাসওভারের সম্পর্ক রয়েছে। এটা অনেকটা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত। কোনো কোনো ভাষায় ইস্টার ও পাসওভার অভিন্ন বা খুব কাছাকাছি। পাসওভারের দিনে ইহুদিদের ব্যাবিলনের বন্দীদশা শেষ হয়।
তবে, ইস্টার সানডের ৪০ দিন আগে থেকে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা উপবাস, ত্যাগ স্বীকার, মাংসাহার ত্যাগ, বিশেষ প্রার্থনা এবং পূণ্যকাজের মধ্য দিয়ে প্রায়শ্চিত্তকাল পালন করেন।
বড়দিনের পর ইস্টার সানডে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষে সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরাও প্রার্থনা ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত রয়েছেন।ইস্টার সানডে উপলক্ষ্যে রোববার ভোরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ ‘সানরাইজ প্রেয়ার’ বা ‘সূর্যোদয়কালীন উপাসনা’ অনুষ্ঠিত হয়। সূর্যদয়ের ঠিক আগ মূহূর্তে যিশুর পুনরুত্থান স্মরণ করে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বিশেষ প্রার্থনায় মিলিত হন।
এছাড়াও, ইস্টার সানডে উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশের সব গির্জায় সারাদিন ধরে বিশ্বশান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইস্টার সানডেতে নতুনভাবে উজ্জীবিত হন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ থাকে। একে অপরের প্রতি শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া দিনটি ঘিরে নানা রকম খাবার-দাবারের আয়োজন থাকে।
Leave A Reply