সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২৮ জন শিক্ষক -কর্মচারীর অনাস্থা

স্টাফ রিপোর্টার :
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার এর অভিযোগ এনে ২৮ জন শিক্ষক -কর্মচারী অনাস্থা দিয়েছেন। বুধবার দুপুরে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শারমিন আক্তার এর বরাবর মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে ২৮ জন বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীবৃন্দ অনাস্থা দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে ২৮ শিক্ষক -কর্মচারীর অনাস্থা পত্রে উল্লেখ, সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিগত ২০১৫-২০১৬, ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভ্যন্তীণ অডিট সম্পন্ন হয়। উক্ত অডিটে ৫৮ লক্ষ ,১৪ হাজার ,০১২ টাকা ০১ এক পয়সা অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলে। এ বিষয়টি তৎকালীন স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের অবৈধ হস্তক্ষেপে নামমাত্র ৫ লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষকের নিকট জরিমানা ধার্য্য করা করা হলে তা থেকে নগদে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিদ্যালয়ের নামে জনতা ব্যাংক, সরিষাবাড়ী শাখায় জমা দেন। অবশিষ্ট ২ লক্ষ ৫০ হাজার ২৫ মাসে পরিশোধ করার নির্দেশনা প্রদান ওই নির্ধারিত টাকার অবশিষ্ট বকেয়া টাকা অদ্যবধি বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা করেন নি। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত না হয়ে আবারও বেপরোয়াভাবে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর হইতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ০৬ টি অর্থবছরে অডিট পরিচালনা করার জন্য দাবী জানান শিক্ষক-কর্মচারীগন।
এ ছাডাও প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের বাসা ভাড়ায় থাকলেও বিদ্যুৎ বিল ও পানির বিল পরিশোধ করেন না। উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি কর্তৃক বিদ্যালয়ে সততা স্টোর ও সততা সংঘ নামে একটি সততা তহবিলের সিন্ধুক জমা করা টাকা থেকে এক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এনটিআরসিএ কর্তৃক বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্ম শিক্ষক নিভা রানী পাল কে ২০১৯ ইং সালের ১৮ ফেব্রæয়ারী তারিখে বিদ্যালয়ে যোগদান করিয়ে পরবতীতে এমপিও ভুক্ত করার নাম করে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা উৎকোচ নেন।
ব্যাংক স্টেটমেন্ট সূত্রে জানা যায়, সালেমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের নামে ব্যবহৃত ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে ও শ্রেণী শিক্ষকদের মাধ্যমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত প্রায় অর্ধ কোটি টাকা তার ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাবে জমা ও উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। বিগত ২০১৬ ইং সালের ১৬ই জুলাই রুপালী ব্যাংক লিমিটেড, আরামনগর বাজার শাখায় হিসাব নং- ৫৯২৬০১০০০০৩১৯ চালু করেন। হিসাব চালু করার পর থেকেই ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষকের নিজ নামীয় ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী হিসাবে বিদ্যালয়ের নামে ছাপানো ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে ২০২১ সালের ১৫ই মার্চ পর্যন্ত ৩৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ১শত ৮৩ টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি অদ্যবধি পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক অমিমাংসিত রয়েছে। দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের অধীনে চাকুরী সম্ভব নয় উল্লেখ করে প্রধান শিকক্ষকের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রদান করে ও তার দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আশুদৃষ্টি কামনা করেন শিক্ষক-কর্মচারী গন।
এ বিষয়ে সদয় অবগতির জন্য শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসক, জামালপুর এর বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করেন শিক্ষক -কর্মচারীগন।
এ ব্যাপারে সহকারী প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান সামাদ, সহকারী শিক্ষক (গনিত) শামীম আহম্মেদ যৌথ ভাবে জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার অব্যাহত রাখায় এর প্রতিকারের জন্য আমরা প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ২৮ জন শিক্ষক -কর্মচারীর অনাস্থা দিয়েছি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শারমিন আক্তার জানান, সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৮ জন শিক্ষক -কর্মচারীর অনাস্থার পত্র হয়তো ডাক ফাইলে দিয়েছে আমি সিন করেছি নিশ্চিত না। এটি দিয়ে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.