সরিষাবাড়ীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর কে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এক নারীর চাকরি

স্টাফ রিপোর্টার: জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে শিক্ষা সনদে জন্মদাতা পিতার নাম বাদ দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরের নাম ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটায় সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাফিয়া খাতুন মিতু নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয় ও বিদ্যালয় এবং পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক মাফিয়া খাতুন মিতু ভাটারা ইউনিয়নের ধোপাদহ জুলারখুপি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুর রহমানের ছোট ছেলে ভাটারাখায়রুল ইসলাম খোকন এর স্ত্রী। তিনি ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি মইশাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। মৃত আবদুর রহমান এর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের জোলারখুপি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবদুর রহমান এর ছেলে খায়রুল ইসলাম খোকন ২০১০ সালে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সিদুলী ইউনিয়নের রায়ের ছড়া গ্রামের হাসান আলী (মাহালি) সুতারের মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিবাহের সময় মাফিয়া খাতুন মিতু রায়েরছড়া সরদার বাড়ী মডেল একাডেমির নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়াও মাফিয়া খাতুন মিতু’র বাড়ির পার্শ্বে ৬৩ নং সরদাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণী থেকে উত্তীর্ণ হয়ে রায়ের ছড়া সরদাবাড়ি মডেল একাডেমিতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ওই বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিস্টার খাতায় ও নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশনের কার্ডে পিতা মাতার নাম ঠিকানা ভিন্নতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার প্রত্যাশায় মিতু নবম শ্রেণিতে পড়া লেখার সময় মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনে জন্মদাতা পিতার নাম মো. হাসান আলী’র পরিবর্তে শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান এর নাম এবং মাতা মালেকা বেগম এর পরিবর্তে শাশুড়ি শরিফা রহমান এর নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। রায়েরছড়া সরদার বাড়ী মডেল একাডেমি থেকে ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর ভাটারা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় পাস করেন মিতু। এ ছাড়াও মিতু নিজের মা-বাবার নামের পরিবর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুর-শাশুড়ির নাম জাতীয় পরিচয়পত্রে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন।

মিতুর জাতীয় পরিচয়পত্র ও শিক্ষা সনদ পর্যালোচনা করে শ্বশুর-শাশুড়ির নাম ব্যবহারের সত্যতা মেলেছে। সনদে তিনি জন্মদাতা বাবা মো. হাসান আলীর পরিবর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমানের নাম ও মা মালেকা বেগমের পরিবর্তে শাশুড়ি শরিফা রহমানের নাম করেছেন। এই বিষয় প্রকাশ্যে আসার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাফিয়া আক্তার মিতু’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ তার স্বামী খায়রুল ইসলাম খোকনের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুর রহমান এর বড় ছেলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘মাফিয়া খাতুন মিতু আমার বোন নন। তিনি আমার ছোট ভাই খায়রুল ইসলাম খোকন এর বিবাহিত স্ত্রী। মিতু যে কাজ করেছেন তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। তিনি আরোও বলেন, এ বিষয়টি এলাকার লোকজন কেউ জানিয়েছি, আমার বাবা মায়ের নাম ব্যবহারের বিষয়টি বারবার নিষেধ করা হলো তা উপেক্ষিত হয়েছে প্রয়োজনে আমরা আদালতে মামলা করব।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘শ্বশুরকে বাপ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়া জালিয়াতি। এটা জঘন্য অপরাধ। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা ইয়াসমিন, জানান মাফিয়া খাতুন মিতুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নির্দেশনা দিয়েছেন । তিনি আরোও বলেন, ‘আমি তদন্ত করে তথ্য প্রমাণাদি পেশ করব।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি তদন্ত করে দেখার জন্য। এ অভিযোগের বিষয়ে সত্য প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.