পয়সা খেয়ে প্রশ্ন কর, সাংবাদিককে এমপি ওমর ফারুক

রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলামের এক প্রশ্নে রেগে গিয়ে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, ‘তোমার প্রবলেম হলো তুমি অলওয়েজ বায়াস। পয়সা খেয়ে প্রশ্ন কর। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’

সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক এমপির এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ‘অভিযোগ’ প্রমাণ করার জন্য তাঁর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। তা না হলে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে বলা হয়। এর পর সাংবাদিকদের তোপের মুখে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান এমপি ফারুক চৌধুরী।

উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল শপথ নেওয়ার পর আজ প্রথম অফিসে যান। বেলাল এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী সমর্থিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে পরাজিত করে উপজেলার চেয়ারম্যান হন। সাংবাদিকরা জানতে পারেন, বেলাল উদ্দিন সোহেলের প্রথম কর্মদিবসেই উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভা হবে। এ সভায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীও থাকবেন। এমন খবরের ভিত্তিতেই সাংবাদিকরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে যান।

উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম কর্মদিবস বলে তাঁর কয়েকশ নেতা-কর্মীও সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সহায়তায় উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বেলালের কর্মী-সমর্থকদের বের করে দিচ্ছেন। ইউএনও নিজেই হ্যান্ডমাইকে বারবার নেতা-কর্মীদের চলে যেতে বলছিলেন।

এর কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন চেয়ারম্যান ও ৩০-৪০ জন নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনে আসেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। এসেই তিনি ‘এ দিকে আস, এদিকে আস। সাংবাদিক সাহেবরা এদিকে আস’ বলে গণমাধ্যম কর্মীদের ডাকতে থাকেন।

এমপি ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ সমন্বয় মিটিং। এই মিটিংয়ে এ লোকগুলো কারা? এই অবৈধ সমাবেশটা কিসের? আমি ইউএনও সাহেবের কাছে প্রশ্ন করলাম। তাঁকে আমি দুই বার কল করে বলেছি, এই সমাবেশ হঠাও। আমাকে হত্যার উদ্দেশে এই সমাবেশ করা হয়েছে এবং এতে ইউএনও সাহেব ইনভলব (যুক্ত) কিনা আই ডোন্ট নো (আমি জানি না)। বাট (কিন্তু) তাকে আমি দুই বার রিকোয়েস্ট (অনুরোধ) করেছি এইগুলোকে হঠানোর জন্য।’

সাধারণ জনগণ কী একজন জনপ্রতিনিধির সঙ্গে প্রথম দিন আসতে পারে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘না। আজকে এখানে মিটিং আছে। জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আসতে পারে না। মিটিংয়ের দিনে পারে না।’

এ সময় কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, ‘আপনার সঙ্গেও অনেক লোক আছে, তারা কেন এসেছেন?’ এ প্রশ্ন শুনেই রেগে যান এমপি ফারুক। তিনি বলেন, ‘এরা চেয়ারম্যান। শোনো, তোমার প্রবলেম হলো- তুমি অলওয়েজ বায়াসড হয়ে, পয়সা খেয়ে প্রশ্ন কর। দিস ইজ ভেরি ব্যাড।’

সাংবাদিকরা এসময় বলতে থাকেন, ‘আপনি এটা খারাপ বললেন। আপনার কথাটা ঠিক নয়। এমন কথা বলার জন্য আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে।’ এসময় ফারুক চৌধুরী প্রতিবাদ করতে থাকা দৈনিক ইত্তেফাকের ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিনের নাম ধরে বলেন, ‘আমি তোমাকে এ কথা বলিনি। যে আমাকে প্রশ্ন করেছে, আমি তাঁকে বলেছি।’ তখন সাংবাদিকরা বলতে থাকেন, ‘উনি আমাদের ইউনিয়ন সভাপতি। আপনি একজন সাংবাদিককে এ কথা বলতে পারেননা। আপনাকে সরি বলতে হবে। আপনি এভাবে কথা বলতে পারেন না।’

এর পর সাংবাদিকদের তোপের মুখে সেখান থেকে দ্রুত উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে চলে যান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।

সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী যাকে-তাকে যখন-তখন অপমানজনক কথা বলেন। তিনি কিছুদিন আগেই নিজের এলাকার এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়েছেন। তাঁকে অত্যন্ত যৌক্তিক একটা প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে যে কথা বলেছেন তা সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক।’

ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি। তিনি বলেন, ‘এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী পুরো সাংবাদিকসমাজকে অপমান করে কথা বলেছেন। তিনি যদি সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা না চান, তাহলে তার সমস্ত ইতিবাচক সংবাদ বয়কট করা হবে। সাংবাদিক ইউনিয়নও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল জানান, ঘটনার সময় তিনি ভেতরে ছিলেন। বাইরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘নতুন একজন জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব নিতে গেলে প্রথম দিনে তাঁর সঙ্গে অনুসারীরা যেতেই পারেন। মানুষ ভালোবেসে আমার সঙ্গে এসেছিলেন। কেউ এমপিকে হত্যার উদ্দেশে আসেননি। এ রকম কেউ চিন্তাও করে না।’

এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে ‘হত্যার উদ্দেশে সমাবেশ’ এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন ইউএনও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে চাননি ইউএনও আতিকুল ইসলাম।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘এমপি সাহেব কী বলেছেন তা শুনিনি। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে ইউএনও আতিকুল ইসলাম ভাল কাজ করছেন। স্থানীয় রাজনীতির দলাদলির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর একজন সংসদ সদস্যকে যে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা আছে তা গোদাগাড়ীর ইউএনও দিচ্ছেন এবং আগামীতেও দিয়ে যাবেন।’

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.