জামাই-শ্বাশুড়ির ‘জোরপূর্বক’ বিয়ে, ১১চেয়ারম্যানসহ মাতব্বরদের বিরুদ্ধে মামলা

টাংগাইল প্রতিনিধি

জোরপূর্বক এই বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আইন লঙ্ঘন, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের তালুকদারসহ ১১জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দা‌য়ের করেছেন ওই শ্বাশুড়ি মাজেদা বেগম

স্বামী-স্ত্রী দ্বন্দ্বে বসেছিলো গ্রাম্য সালিশ। সেখানে স্ত্রী ওই স্বামীর সংসার করতে না চাওয়ায় রেগে গিয়ে একটি উক্তি করেছিলেন স্ত্রীর মা। আর তখন ওই শ্বাশুড়ি আর স্বামীর বিরুদ্ধে ‘অনৈতিক সম্পর্কের’ অভিযোগ এনে তাদের মারধরের পর বিয়ে পড়িয়ে দেন স্থানীয় মাতব্বররা।

জোরপূর্বক এই বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আইন লঙ্ঘন, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের তালুকদারসহ ১১জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দা‌য়ের করেছেন ওই শ্বাশুড়ি মাজেদা বেগম। ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেছেন তিনি।

রোববার দুপুরে আইনজীবি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এর সহযোগিতায় গোপালপুর আম‌লী আদালতের বিচারক শামছুল হকের আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন তিনি। পরে আমলী আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৯ আগষ্ট টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের কড়িয়াটা গ্রামের নুরু মিয়ার মেয়ে নূরুন্নাহারের সাথে পার্শ্ববর্তী ধনবাড়ি উপজেলার হাজরাবাড়ী এলাকার মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোনছের আলীর বিয়ে হয়।

বিয়ের দেড় মাসের মাথায় নুরুন্নাহারের মা মাজেদা বেগম তার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই মোনছের আলীকে দাওয়াত করে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। একই দিনে স্বামী মোনছের আলী স্ত্রী নুরুন্নাহারকে বাড়ি ফিরে যেতে বললে স্ত্রী নুরুন্নাহারের সাথে তার ঝগড়া হয় এবং সে তার সংসার করবে না বলে জানায়।

স্বামী স্ত্রীর দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ গ্রামের মাতব্বরদের নিয়ে সালিশী বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে স্বামীর সাথে সংসার করতে অস্বীকৃতি জানায় নুরুন্নাহার।

মেয়ে এবং মেয়ের জামাইয়ের ঝগড়ার এক পর্যায়ে শাশুড়ি মাজেদা বেগম ‘রাগ এবং ক্ষোভে’ বলে ওঠেন, ‘তুই সংসার না করলে আমি সংসার করবো’।

আর এতেই মেয়ের জামাইয়ের সাথে ‘অনৈতিক সম্পর্কের’ অভিযোগ তুলে শ্বাশুড়ি ও মেয়ের জামাইকে বেদম প্রহার করে সালিশে উপস্থিত মাতব্বররা। এরপর মাজেদার স্বামীকে দিয়ে মাজেদাকে এবং তার মেয়েকে দিয়ে মেয়ের জামাইকে তালাক দিতে বাধ্য করে তারা। আবার একই সাথে স্থানীয় কাজী গোলাম মাওলা জিন্নাকে ডেকে এনে শ্বাশুড়ির সাথে মেয়ের জামাইয়ের বিবাহ রেজিস্ট্রি করান।

এদিকে জামাই মোনছের আলী ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের নামে যাতে মামলা না করে সে জন্য প্রতিনিয়তই তাকে ‘মেরে ফেলার’ হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনিও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

মাজেদার আইনজীবি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জানান আইন লঙ্ঘন,
ধর্ম অবমাননা, শারীরিক নির্যাতন ও মানহানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.