কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোয়া দুই কোটি টাকার প্রকল্পে দায়সারা কাজের অভিযোগ

 

 

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ১শ ২৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দের প্রায় সোয়া ২কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অনেক বিদ্যালয়ে দায়সারা ভাবে কাজ করেই বরাদ্দের টাকা আতœসাত করা হয়েছে। গত অর্থ বছরের জুন মাসের মধ্যেই কাজ সমাপ্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও কিছু বিদ্যালয়ে এপর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় ,গত অর্থ বছর উপজেলার ১শ ২৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২লক্ষ টাকা হিসেবে ৮০লক্ষ,২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় লক্ষ টাকা হিসেবে ৩৩ লক্ষ,স্লিপ প্রকল্পে ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭০হাজার টাকা হিসেবে ১১লক্ষ ৯০হাজার ও ৫০হাজার হিসেবে ১০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫২লক্ষ ৫০ হাজার, রুটিন ম্যাইন্টেনেজ প্রকল্পে ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০হাজার টাকা হিসেবে ৩৬লক্ষ,প্রাক-প্রাথমিক প্রকল্পে ১শ ২৩টি বিদ্যালয়ে ১০হাজার হিসেবে ১২লক্ষ ৩০হাজার এবং ওয়াসব্লোক প্রকল্পে ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০হাজার টাকা হিসেবে ১লক্ষ ৮০হাজার ও ১০হাজার হিসেবে ৩টিতে ৩০হাজার টাকা সর্বমোট ২ কোটি ২৭লক্ষ ৮০হাজার টাকার বরাদ্দ আসে। নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রকল্পের কাজ ৩০ জুনের মধ্যে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও নির্ধারীত সময়ে কোন স্কুলেই কাজ শুরু হয়নি। পরে জুলাই মাসে বিদ্যালয় গুলোতে ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও অনেক বিদ্যালয় এপর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি।

 

অভিযোগে উঠেছে, যেসব বিদ্যালয়ে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে,তাদের অধিকাংশরা ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পে নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করলেও অন্য প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা কাজ না করেই আতœসাত করেছেন। একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকারী শিক্ষকগণ জানান,ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের কাজে বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে উপজেলা এলজিইডি কর্তৃপক্ষের  প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হওয়ায় বিদ্যালয় গুলোতে এই প্রকল্পের কিছু কাজ হলেও অন্যান্য প্রকল্পে প্রত্যয়নের প্রয়োজন না থাকায় ভূয়া বিল ভাউচার দিয়ে টাকা উত্তোলন করে আতœসাত করা হচ্ছে।

 

সরেজমিনে ও খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের ঠাটমারী,নীলের কুটি ও সাকোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের,চন্দ্রপাড়া,মানাবাড়ি ও কালিরহাট সর: প্রা: বিদ্যালয়,ঘড়িয়াল ডাঁঙ্গা ইউনিয়নের রাজমোহন,বাঘআছড়া,চরগতিয়াশাম ও কিসাামত গোবদা সর: প্রা: বিদ্যালয়,উমর মজিদ ইউনিয়নের ফরকেরহাট,রাজমাল্লীরহাট,পান্থাবাড়ি,উমর পন্থাবাড়ি,ছোট মহিষমুড়ি,ঘুমারুভিমশীতলা ও ধনঞ্জয় সর: প্রাথ: বিদ্যালয়,নাজিমখাঁন ইউনিয়নের রাঘব ও বাছড়া সর: প্রা: বিদ্যালয় এবং ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়া ও ছিনাই হাট সর: প্রা: বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে একাধিক প্রকল্পে সরকারী অর্থ বরাদ্দ থাকলেও ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পে কিছু বিদ্যালয়ে আংশিক কাজ হলেও অন্যান্য প্রকল্পে কোন কাজ না করেই বিল উত্তোলন করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী কর্তৃক প্রনীত স্টিমেটের সাথে কোথাও কোন বিদ্যালয়ের কাজের মিল নেই। বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যের জাল স্বাক্ষরেও বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। কোনকোন প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাথে বনিবনা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মনিটরিংয়ের অভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

 

উপজেলার খুলিয়াতারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি তছলিম উদ্দিন লিখিত অভিযোগে জানান, এবিদ্যালয়টিতে কোন কাজ করা হয়নি। অথচ উক্ত বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত,স্লিপ এবং প্রাপ-প্রাথমিক প্রকল্পে ২লক্ষ ৬০ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক সত্য রঞ্জন কাজ না করে এবং আমাকে বাদ দিয়ে গোপনে বিল উত্তোলনের পায়তারা করছেন। এবিষয়ে তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করেন।

 

তবে খুলিয়াতারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্য রঞ্জন কাজ শুরু না হওয়ার সত্যতা স্বীকার করলে অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এগুলো অভিযোগ সঠিক নয়।

 

এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি‘র প্রকৌশলী আবু তাহের মোঃ সফি জানান,কিছু কিছু বিদ্যালয়ে স্টিমেটের সাথে অমিল থাকতে পারে। তবে দেখেশুনে প্রত্যয়ন পত্র দেয়ার দাবী করেন তিনি।  অন্যান্য প্রকল্পের কাজে তার কোন দায়ভার নেই বলেও জানান।

 

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান জানান,কোন বিদ্যালয়ে কাজ হয়নি এমন অভিযোগ পাইনি,অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব।#

 

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.