ঠেলাগাড়িতে নিতে হলো মরদেহ

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্স না দেয়ায় ইট বহনকরা ঠেলাগাড়িতে করে আত্মীয়’র মরদেহ নিলেন এক দম্পতি। বুধবার ভারতের তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরম জেলার পুদুচেরির সুথুকেনি এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।

স্থানীয়দের বরাদ দিয়ে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ইরুলা সম্প্রদায়ভুক্ত আদিবাসী যুবতী মাল্লিগার সঙ্গে পুদুচেরির এক ব্যক্তির বিয়ে হয়েছিল। কয়েকদিন আগে তাদের বাড়িতে ওজানথিয়াপেট থেকে ঘুরতে আসেন মাল্লিগার দিদি ও জামাইবাবু সুব্রমণি।

এর পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত সুব্রমণি। গত বুধবার আচমকা তার শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়। পরিস্থিতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

এলাকায় কোনো অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে কী করবেন বুঝে ওঠতে পারছিলেন না তারা। বাধ্য হয়ে ইট বহনকারী একটি ঠেলাগাড়িতে সুব্রমণিকে তুলে চার কিলোমিটার দূরে থাকা হাসপাতালে যান। কিন্তু, সেখান যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাতেও বিপত্তি কমেনি ওই দম্পতি এবং সুব্রমণির স্ত্রীর।

মরদেহটি নিয়ে তামিলনাড়ুর বাড়িতে ফিরতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স চান তারা। কিন্তু, তাতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো তাদের জানায়, সরকারি আইন অনুযায়ী, পুদুচেরির বাইরে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই। বাধ্য হয়ে মরদেহটি ফের ঠেলাগাড়িতে উঠিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তারা।

ওই দম্পতি যখন ঠেলাগাড়িতে করে অসুস্থ সুব্রমণিকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন তখন পথচারীরা বিষয়টি দেখেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। তাদের ছবি তুলে স্যোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেন। বিষয়টি ভাইরাল হতেই নড়েচড়ে বসে স্থানীয় কাট্টারিকূপম থানার পুলিশ। খবর দেয়া হয় এসডিপিআই নামে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের। এরপর ওই সদস্যরা একটি অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে সুব্রমণির মরদেহটি তার তামিলনাড়ুর বাড়িতে পৌঁছে দেন।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জে মুরুগানন্দন বলেন, ইরুলা উপজাতির ওই দম্পতি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সংসারের অভাব মিটিয়ে মোবাইল কেনার সামর্থ্য হয়নি তাদের। শেষপর্যন্ত সুব্রমণিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইট বহনকারী একটি ঠেলাগাড়ি জোগাড় করে নিয়ে আসেন। কিন্তু রাস্তাতেই তার মৃত্যু হয়। বাড়ি ফিরতে ফের ওই ঠেলাগাড়িতেই ভরসা রাখেন তারা।

যদিও বিষয়টি জানতে পেরে মরদেহটি বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন। পথচারীরা ছবি তোলার পাশাপাশি যদি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা থানাকে খবর দিত তাহলে ভাল হত। ওই ব্যক্তির প্রাণও বাঁচত।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.