তামিমকেও প্রস্তাব দিয়েছিলেন ‘জুয়াড়ি আগারওয়াল’

অনলাইন ডেস্ক:

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের এমন অজ্ঞতায় বিস্মিত অনেক ক্রিকেটারই। ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল।খুব অল্প সময়ে তিনবার তাকে বিভিন্নভাবে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন ওই জুয়াড়ি। প্রস্তাব গোপন করে আইসিসি থেকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

এর মধ্যে এক বছর রয়েছে স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। তবে সাকিব এমন কাজ করলেও দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল জুয়াড়ি নিয়ে ছিলেন সতর্ক। ২০১৭ সালের বিপিএলে তাকেও একই জুয়াড়ি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেন বিসিবির দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা মেজর (অব) মোর্শেদকে।

বিসিবির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, সাকিবের মতো তামিমকেও ডেকেছিল আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ। চেক করা হয়েছিল তার মোবাইল। কিন্তু কোনো কিছুতেই তামিমের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাননি তারা। এরপর ক্লিয়ার্ড বলে তামিমকে ছেড়ে দেন আইসিসির কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) আইসিসি প্রেরিত সাকিবের আমলনামায় সংযুক্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের যে বিশাল ফিরিস্তি দেওয়া আছে, সেখানেও দীপক আগারওয়ালের নাম রয়েছে। আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তাকে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে সাকিব জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের নভেম্বরে পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন দীপক আগারওয়াল। এটা তিনি জানতেন। এবং এটাও জানতেন যে তাঁর পরিচিত ব্যক্তির (নাম উল্লেখ করা হয়নি) কাছ থেকে বিপিএলে অংশগ্রহণকারী আরো অনেক ক্রিকেটারের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন দীপক।

সেবার বিপিএল অনুষ্ঠিত হয়েছিল নভেম্বর মাসে। তবে কি সাকিবের পরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকেই তামিম এবং আরো কয়েক ক্রিকেটারের নম্বর জোগাড় করেছিলেন দীপক? সেসব প্রশ্নের উত্তর নেই আইসিসি প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। তবে বিপিএলের মাঝপথে ঢাকায় উপস্থিত আকসুর কর্মকর্তাদের দরবারে তামিমকে হাজির হতে হয়েছিল।

বিসিবির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, সেদিন ঢাকার একটি হোটেলে আকসুর অস্থায়ী কাঠগড়ায় তামিম ছাড়াও ডাকা হয়েছিল আরো ছয় বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে।

সেখানে ঢুকে কিছুটা হকচকিত হয়ে যান তামিম। আকসুর নারী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় দীপক আগারওয়ালের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের বিষয়টি। তবে আগেই বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের কর্মকর্তা মেজর মোর্শেদকে জানিয়ে রাখায় তামিমের কোনো সমস্যা হয়নি, জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।

তবে এতেই নাকি সন্তুষ্ট হননি আকসুর দুই প্রতিনিধি। তাঁরা তামিমের কললিস্ট পরীক্ষা করেন। সেখানে দীপকের নম্বর যথারীতি পাননি। কারণ দীপক জুয়াড়ি সন্দেহ হতেই নম্বরটি ব্লক করে দিয়েছিলেন তামিম। পরে হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ থেকে দীপকের সঙ্গে খুদেবার্তার রেকর্ড অবশ্য তামিমই দেখিয়েছেন আকসুর কর্মকর্তাদের। অবশ্য এর স্ক্রিনশট আগেই বিসিবির দুর্নীতি দমন বিভাগের মেজর (অব.) মোর্শেদকে পাঠিয়েছিলেন তামিম।

সেসব টেক্সট পাঠ করেছেন এমন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন তামিমের সঙ্গে দীপকের খুদেবার্তায় আলাপের সারসংক্ষেপও, এরা শুরুতে সাধারণ ভক্ত পরিচয়ে কিংবা কারো রেফারেন্সে আলাপ শুরু করে। দীপক ফ্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। বলেছিল, দেখা করতে চায়। তামিমের পক্ষ থেকে সাড়া না পাওয়া একসময় সে (দীপক) ডেসপারেটলি প্রস্তাব দেয়—এবার তো টিভিতে খেলা (বিপিএল) দেখাবে। টাইম টু মেক সাম মানি।

এ বার্তা পাওয়ার পরপরই মোর্শেদকে বিষয়টি অবহিত করেন তামিম। বেঁচে যান তিনি। এটাই নিয়ম। আইসিসি ইভেন্ট তো বটেই, দ্বিপক্ষীয় সিরিজের আগেও অংশগ্রহণকারী ক্রিকেটারদের খেলা শুরুর আগেই বিশেষ সভায় ডেকে সতর্ক করে দেওয়া হয় জুয়াড়িদের ব্যাপারে। ছবি দেখানো হয়, গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা চিহ্নিত জুয়াড়িদের গতিবিধি এবং ফোন নম্বরের পাশাপাশি সম্ভাব্য কোন উপায় এবং কী ভাষায় জুয়াড়িরা ক্রিকেটারের মনে ঘর বাঁধতে চায়, এর বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। সেসব সভায় অংশ নিয়ে অভ্যস্ত একজন ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘কথাগুলো এতবার শুনেছি যে মুখস্থ বলে দিতে পারব!

সাকিব আল হাসান অবশ্য নিজেও সে দলেই পড়েন। আকসুর জিজ্ঞাসাবাদে তিনিও বলেছেন, জুয়াড়ির সংশ্রবে এলে বিষয়টি আকসুকে জানানো বাধ্যতামূলক। না জানালে শাস্তির বিষয়টিতেও অবগত তিনি।

এর পরও আকসুর রাডারে ধরা পড়া দীপক আগারওয়ালের সঙ্গে তিন দফা যোগাযোগের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাননি সাকিব আল হাসান। অথচ কিছু খুদেবার্তা পেয়েই তামিম বুঝে ফেলেন দীপক আগারওয়াল জুয়াড়ি। আর জুয়াড়ি হিসেবে কাউকে সন্দেহ হলেই সেটি আকসুকে অবহিত করার নিয়ম।

সে নিয়ম মেনে ২০১৭ নভেম্বরের আগেও আকসুর কাছে আরেক ভারতীয় সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন তামিম। ২০০৮ সালের ওই ঘটনায় তামিমের সঙ্গে সঞ্জয়ের ব্যাপারে আকসুকে অবহিত করেছিলেন সাকিবও, যা ২০১০ সালে লর্ডস টেস্ট শুরুর আগে আচমকাই মিডিয়াকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। অথচ ওই ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর আরো পরিণত সাকিব জুয়াড়ির সঙ্গে তিন দফা যোগাযোগের বিষয়টি অবহিত করার বিষয়টিকে গুরুত্বই দিলেন না!

এ ব্যাপারে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।‘দীপক আগারওয়াল তো…, এটুকু শুনেই ফোনের লাইন কেটে দেন তিনি। এরপর খুদেবার্তা পাঠিয়েও তামিমের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

পূর্বপশ্চিমবিডি

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.