টেন্ডার কিং জি কে শামীমের সব কাজ বাতিলের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

নিউজ ডেস্ক:

আলোচিত টেন্ডার কিং ও ‘যুবলীগ নেতা’ গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সব প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তার মালিকানাধীন জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের নামে তিনি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ১৭টি নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। সম্প্রতি টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন।তাই থেমে আছে প্রকল্পের কাজ।

এদিকে, শামীমের নেওয়া সরকারি প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেছেন, জি কে বিল্ডার্সের অধীনে যেসব প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেমে আছে, সেগুলো বাতিল করে রিটেন্ডারিং করা হোক। আর যেসবের কাজ এখনও শুরু হয়নি, সেগুলো প্রয়োজনে সেকেন্ড লোয়েস্টকে দিন।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন। সভায় অংশ নেয়া একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জি কে বিল্ডার্সের প্রকল্পগুলোর কাজ থমকে আছে। এসব কাজের জন্য সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে তারা সভায় উল্লেখ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ফের ওই নির্দেশনা দেন।

এর আগে ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে জি কে শামীমের প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, কীভাবে একটি কোম্পানি এত কাজ পায়। জবাবে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, অভিজ্ঞতা, সক্ষমতা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই শামীমকে কাজ দেয়া হয়েছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জি কে শামীমের যত কাজ আছে, সব বাতিল করতে হবে। সেটা যেন বিধি অনুসারে হয়। যত দ্রুত সম্ভব এগুলো পুনঃটেন্ডার করতে হবে। যেন কাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। একই সঙ্গে এরকম যারা বিতর্কিত ঠিকাদার রয়েছে, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারির কাজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সচিবালয়, র‌্যাব হেডকোয়ার্টার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রায় ১৭টি নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে সচিবালয়ে ১৫০ কোটি টাকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবন ও ১৫০ কোটি টাকার কেবিনেট ভবন; আগারগাঁওয়ে ৪০০ কোটি টাকার এনবিআর ভবন; বিজ্ঞান জাদুঘরে ১০০ কোটি টাকা; সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বর্ধিত ভবন নির্মাণে ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প, পঙ্গু হাসপাতালে ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প, ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার, ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পে মহাখালী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, বেইলি রোডে ৩০০ কোটি টাকার পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স; এনজিও ফাউন্ডেশনের ৬৫ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি ২০-২৫ কোটি টাকার অ্যাজমা হাসপাতাল, ২০-২৫ কোটি টাকার ক্যানসার হাসপাতাল, ২০-২৫ কোটি টাকার সেবা মহাবিদ্যালয়, ৮০ কোটি টাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল, ৮০ কোটি টাকার বিজ্ঞান জাদুঘর, ১২ কোটি টাকার পিএসসি, ৬৫ কোটি টাকার এনজিও ফাউন্ডেশন এবং মিরপুর-৬ তে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ রয়েছে জি কে শামীমের হাতে।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.