সেই এসিল্যান্ড প্রত্যাহার, হাসপাতালে চাকরি পেলেন মুক্তিযোদ্ধার ছেলে

দিনাজপুর সংবাদদাতা

মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের সম্মানহানি ও তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের দায়ে দিনাজপুর সদরের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) আরিফুল ইসলামকে স্ট্যান্ড রিলিজ (প্রত্যাহার) করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ অক্টেবর) সকালে তাকে প্রত্যাহার করে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার অফিস।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এস এম তরিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়ি দিনাজপুর সদর উপজেলার যোগীবাড়ি গ্রামে। তিনি ছেলেকে অপমান করে চাকরি কেড়ে নেওয়ায় ক্ষোভে-দুঃখে মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করার কথা বলে যান। তার অসিয়ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দাবি ওঠে এসিল্যান্ডের বিচারের। এমতাবস্থায় আজ সকালে তাকে প্রত্যাহার করা হলো।

এদিকে আজ সকালে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের কবর জিয়ারত করেছেন। এসময় তিনি মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূর ইসলামকে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এস এম তরিকুল ইসলাম।

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাকে অসম্মানের ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

এর আগে এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জয়নুল আবেদিন ও সদর এসিল্যান্ডকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছিল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

উল্লেখ্য, দিনাজপুরের এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার ভূমি) অফিসে অস্থায়ী ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে নূর হোসেন গত ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গাড়িচালক পদে চাকরি পান। চাকরি নেওয়ার পর থেকেই দিনাজপুরের এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী নিজ বাড়ির বাজার করিয়ে নিতেন। বাড়ির যাবতীয় অন্যান্য কাজও করিয়ে নিতেন তাকে দিয়ে। এমনকি বাড়ির রান্না ও শৌচাগারও পরিষ্কার করিয়ে নিতেন। সম্প্রতি নূর ইসলাম কোনো অপরাধ না করলেও তাকে গাড়িচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত করেন এসিল্যান্ড আরিফুল ইসলাম।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ছেলের এমন অপমান সইতে পারছিলেন না ইসমাইল হোসেন। মৃত্যুর আগে তিনি একটি চিঠি লিখে গেছেন, ‘অস্ত্র হাতে জীবনবাজি রেখে যে দেশ স্বাধীন করলাম, সে দেশে আমার ছেলের রুজি-রোজগারটুকুও অন্যায়ভাবে কেড়ে নেয়া হলো! এসিল্যান্ড, ইউএনও, এডিসি, ডিসি আমার ছেলেকে চাকরি ও বাস্তুচ্যুত করে পেটে লাথি মেরেছে। তাই মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদার অংশ হিসেবে তাদের স্যালুট আমার শেষ যাত্রায় চাই না।’

বুধবার বেলা ১১টায় চিকিৎসাধীন মারা গেলে চিঠিতে উল্লেখ করা ‘শেষ ইচ্ছা’ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ইসমাইল হোসেনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন করা হয়। এ সময় ‘গার্ড অব অনার’ দিতে আসা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের ফিরিয়ে দেন ইসমাইল হোসেনের স্বজন-পরিজনরা। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের শেষ বিদায়ে বিউগলে বাজেনি বিদায়ের সুর। এমনকি তার মরদেহ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিতও করা হয়নি।

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.