জাহালম কাণ্ডে সোনালী ব্যাংক দায় এড়াতে পারে না: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ভুল আসামি হয়ে প্রায় তিন বছর কারাগারে থাকা পাটকল শ্রমিক জাহালমের বিষয়ে রিটের চূড়ান্ত শুনানির জন্য ৩১ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেছে হাইকোর্ট। এ মামলার শুনানির সময় ‘জাহালম কাণ্ডে সোনালী ব্যাংক দায় এড়াতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছে আদালত। পরে আদালত পরবর্তী শুনানির আগামী ৩১ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।

ঢাকাটাইমসকে সাইফুল আলম বলেন, ‘শুনানির সময় আদালত বলেছে এ মামলার জাহালম বিনাদোষে জেল খেটেছে। এর দায় এড়াতে পারে না সোনালী ব্যাংক। পরে আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করেন।’

এর আগে গত ১১ জুলাই আদালতের নির্দেশে ২৬ মামলায় ‘ভুল’ আসামি হয়ে জাহালমের জেল খাটার ঘটনা তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে দুদক। প্রতিবেদনে দুদক কর্মকর্তাদের তদন্তে গাফিলতি, ব্যাংক কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতা ও অর্থআত্মসাতের ঘটনায় একটি চক্রের লিপ্ত থাকার বিষয় বিষয় তুলে ধরা হয়।

এ বিষয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একটি জাতীয় দৈনিকে। বিষয়টি হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত।

এরপর ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনিত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করে। দুদকের ৩৩ মামলার মধ্যে মোট ২৬ টিতে ‘ভুল’ আসামি হয়ে জেল খাটার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি ও মামলার বাদীসহ চারজনের ব্যাখ্যা শোনেন আদালত।

কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না, তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না এবং তাকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এ মর্মে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলও করে আদালত। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।

জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক। তবে, হাইকোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্রসহ (সিএস) যাবতীয় নথি তলব করে হাইকোর্ট।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.