টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে মা ও মেয়েকে একসাথে তালাক।। একই বৈঠকে মেয়ের-জামাই‘র সাথে-বিয়ে দিলে শাশুরীকে

ধনবাড়ী (টাংগাইল) প্রতিনিধি:

আলোচিত এমন ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালি ইউপির হাজরাবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় হাজরাবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামের ওয়াহাদ আলীর ছেলে মুনছের আলী (তুল তুলির)(২৮)এর সাথে গোপালপুর উপজেলার করিআটা গ্রামের মাজেদা বেগম (৫৫)এর মেয়ে নূরুন্নাহারের সাথে তাদের ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ হয় আনুমানিক ৩ মাস আগে।

এদের মধ্যে গত সাতদিন আগে তাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
এরই মাঝে শাশুড়ি মাজেদা বেগম মেয়েকে দেওয়ার জন্য মেয়ের জামাই মুনছের আলী (তুল তুলির) বাড়িতে মেয়ের স্বামীর বাড়িতে এসে মেয়ের জামাইকে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে চলে যান।

এমন অবস্থায় করিআটা গ্রামের বিভিন্ন মাতাব্বর মেম্বার এবং গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের তালুকদার ও ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজামা মিন্টু‘র উপস্থিতিতে একটি সালিশী বৈঠক হয় ।

উক্ত সালিশি বৈঠকে স্থানীয় এলাকার মানুষ ও ছেলে পক্ষের কিছু মাতাব্বর ডেকে নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ছেলে এবং তার শাশুড়িকে বেদম পিটুনি দিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেয়েকে তার স্বামীর কাছ থেকে তালাক প্রদান করা হয়, এবং মেয়ের মাকে তার বাবার কাছ থেকে তালাক প্রদান করা হয়।

এমন ঘটনাটির তালাক সম্পাদন করেন গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের কাজী জিনাত জিনা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান দুটি তালাক নামা একই সাথে সম্পাদন করা হয়েছে।স্থানীয় মাতাব্বর ও ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে।

মা মেয়েকে তালাক দেওয়ার পরে স্থানীয় মাতব্বর ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিয়ে কৌশল চালিয়ে শাশুড়ির সাথে মেয়ের জামাইকে জোরপূর্বক ভাবে বিবাহ দেওয়ার আয়োজন করেন।

পরে মেয়ের জামাই মনসুর আলী তার শাশুড়ি বর্তমানে তার স্ত্রী নিয়ে তার নিজ বাড়িতে ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউপির হাজরাবাড়ী গ্রামে নিয়ে আসেন।

এমন ঘটনা এলাকার মধ্যে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মনসুর আলী তার সাবেক শাশুড়ি এবং বর্তমান স্ত্রীকে রেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
বর্তমানে এ বিষয়ে মাজেদা বেগমের সাথে দেখা করে কথা বললে তিনি জানান আমাদেরকে জোরপূর্বক ভাবে ২ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মাতব্বর মিলে ইসলামী শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ করে আমাদের জোরপূবক মেয়ের জামাইর নিকট বিয়ে দেয়।

 

 

 

এমন ইসলামবিরোধী এসকল ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলে কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে জামাই ও শাশুড়ি কে দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছে ।
স্থানীয় লোকজন জানান উক্ত শাশুড়ি করিআটা গ্রামে বিভিন্ন ঘটনা ঘটালেও মেয়ের জামাইয়ের সাথে এভাবে তাকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা সম্পন্ন ইসলামবিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত। স্থানীয় মাতাব্বর যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিচার দাবি করেন ভুক্তভুগি মাজেদা বেগম।

এই ঘটনাটি নিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে হাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন আমি একটি মিটিংয়ে রয়েছি আপনাদের সাথে পরে কথা বলব।
ঘটনাটি নিয়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার  বলিবদ্র ইউপি বর্তমান চেয়ারম্যান মিন্টু বলেন ঘটনাটি আমার জানা নেই আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রথম শুনলাম।
এ ঘটনায় মনসুর আলীকে পাওয়া না গেলেও সাবেক তার শাশুড়ি বর্তমানে স্ত্রী মাজেদা বেগম বলেন আমার মেয়ের জামাই কোন অপরাধ নেই। স্থানীয় লোকজন আমাদেরকে এভাবে ফাঁসিয়েছে এবং আমার চারটি মেয়ে রয়েছে চারটি মেয়ের মধ্যে আমি মুনসুরের  নিকট আমার আপন বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম।

আমি মেয়ের জামাই বাড়িতে এসে মেয়ের জামাইকে সাথে নিয়ে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথেই কতিপয় লোকজন আমাকে এবং আমার মেয়ের জামাইকে বেদম প্রহার করে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে আমাদেরকে জোরপূর্বক ভাবে বিবাহে আবদ্ধ করে।  আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ করানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ছেলের গ্রামের বাড়ী হাজরাবাড়ী গ্রামের সাধারণ মানুষ জানান এটা ইসলামবিরোধী কাজ।

ইসলাম বিরোধী কাজের জন্য আমরা এর বিচার চাচ্ছি এবং যারা এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে এর ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করছি।
ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে দুটি চেয়ারম্যান, স্থানীয় কতিপয় মাতব্বর।  এ এলাকার মাতব্বরদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, মা মেয়ে দুজনে খারাপ আর যার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।

তারা ক্যামেরার সামনে কথা না বললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান দুটি চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় কিছু অসাধু মাতব্বর এমন বিচার করেছে এবং উভয়ের কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে কাগজ রাখা হয়েছে যা দিয়ে যা খুশি তাই করতে পারে বলে স্থানীয়রা জানান।

বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ইসলামী শরিয়তের মুফতিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক শাশুড়িকে কখনই তার মেয়ের জামাই বিয়ে করার অধিকার নেই।

 

 

ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক তালাকের পর ৩ মাস ইদ্দত কাল পালনের পর দ্বিতীয় বিয়ের বিধান রয়েছে।  কিন্তু স্থানীয় মাতাব্বরা মাজেদাকে তার স্বামী দিয়ে তালাক দেওয়ায়ে এবং মেয়ে কে দিয়ে তার স্বামী কে তালাক দেওয়ায়ে সাথে সাথে কেমনে শাশুরী মাজেদা কে কেমনে আবার বিয়ে দিল তার মেয়ে জামাতার নিকট!

 

এমন ঘটনা যদি সত্যি হয় তবে স্থানীয় মাতাব্বর এবং যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কেন বিচারের আওতায় আনা হবে না!

ইসলামে এমন ঘটনার জন্য অনেক বড় ধরনের শাস্তি রয়েছে।
ঘটনা নিয়ে মাজেদা বেগম আরও জানান তার শরীরে অনেক জখম রয়েছে যেখানে স্থানীয় মাতব্বররা তাদেরকে পিটিয়েছে। আর তিনি আর্তনাদ করে বলেন এমন ঘটনা পৃথিবীতে আর যেন কারো সাথে না ঘটে। আপনারা যারা আসছেন আমার জান ভিক্ষা দেন এবং আমাকে এখান থেকে আপনারা নিয়ে যান।

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.