মধুপুরে কাচামাল ব্যবসায়ী কাদের হত্যার প্রধান আসামী নয় মাসেও আটক হয়নি

লাবু খন্দকার(ক্রাইম রিপোর্টার)টাঙ্গাইল: মধুপুরে কাচামাল ব্যবসায়ী কাদের হত্যাকান্ড সংঘটিতের নয় মাস অতিবাহিত হলেও মূলহোতা আবুল কালাম গ্রেফতার হয়নি। ২০১৯সালের ১০জানুয়ারী সকালে ফোনে আনারস বিক্রির কথা বলে বেরিবাইদ ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামের
মৃত ওয়াজকরনির পুত্র কাচামাল ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের (৩২)কে ডেকে নেয় সোলাকড়ি ইউনিয়নের রাগামারি গ্রামের আব্দুস সামাদের পুত্র ওসমান গণি (৪০)।তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আনারস কেনার জন্য নিয়ে যায়। দুপুর ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন লোকজন তাকে দেখতে পেয়েছে। তার ছোট ভাই ২টার পর পরই ফোন দিলে কাদেরের ফোন সুইচ অফ ছিল। নিকট আত্নীয়রা বার বার ফোন দিয়েও তাকে আর পায়নি। না পেয়ে তাকে খোজাখোজি শুরু করে। সারাদিন না পেয়ে ওই রাতে মধুপুরথানায় তার ছোট ভাই হারুন মিয়া (২০)সাধারণ ডায়েরী করেন।

১২জানুয়ারী অরনখোলা ইউনিয়নের আমরিতলা গ্রামের গরুর রাখাল মারফত গুগুর বাজারে মাতাব্বর আব্দুস সামাদ জানতে পারে যে, লহুড়িয়া তিন মাইলের খুটি সংলগ্ন হাতিবান্ধায় শাল বনের ভিতরে একটি মোটর সাইকেল পড়ে রয়েছে। আব্দুস সামাদ নিখোজ কাদেরের বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জানায়। গ্রামবাসীসহ পরিবার সদস্য ও পুলিশ নিখোজ কাদেরের মোটর সাইকেল ও জঙ্গলের ভিতর খোজাখোজির পর কাদেরের আগুনে পোড়ানো লাশ গাছের সাথে বাধানো ডাল পালা দিয়ে হেলানো অবস্থায় দেখতে পায়।নিহতের ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও লাশের ডান হাতে ব্যবহৃত তিনটি রুপার আংটি দেখে তার ছোট ভাই মোবারক হোসেন সনাক্ত করে এটি তার ভাই কাদেরের লাশ। লাশের মাথায় কুপানো
গভীর কাটা চিহৃ পাওয়া যায়। কাদেরের লাশ অরণখোলা পুলিশ ফাড়িতে নেয়া হয়।

হত্যাকান্ডের ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত আসামী আবু তালেব পুলিশী জিঙ্গাসাবাদে জানায়, আনারসের বাগান দেখানোর কথা বলে নিয়ে যায় জঙ্গলে ।প্রথমে জঙ্গলের ভিতরে উৎপেতে থেকে কাদেরকে তার দলপল নিয়ে আক্রমণ করে কাদেরকে কালাম বাগি দা দিয়ে কোপ মারলে আবু তালেব ভয়ে ওমা গো, ও বাবা গো বলে দৌড়ে পালায়।তার পরই শুরু হয় হত্যাযঙ।ময়নাতদন্তে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে তাকে কুপিয়ে হত্যা করার পর আগুনে
পোড়ানো হয়েছে।রবিবার ১৩জানুয়ারী মধুপুর থানায় নিহতের ছোট ভাই মোবারক হোসেন অজানা ব্যক্তিদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং-০৬ ।

কাদেরের মুঠোফোনে কলরেকর্ড অনুযায়ী প্রথমে গণি মিয়াকে অরণখোলা ফাড়ির পুলিশ গ্রেফতার করে।তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জলছত্র গ্রামের মোতালেবের পুত্র হত্যাকারী আবু তালেব কে গ্রেফতার করে ও মাগুন্তিনগর গ্রামের হাবিবুরের পুত্র খুনি সাইদুরকে জিঙ্গাসাবাদের পর ৩০২ধারা মোতাবেক আসামী উল্লেখ করে টাঙ্গাইল জেল হাজতে প্রেরণ করে। পুলিশী জিঙ্গাসাবাদে তারা কাদের হত্যায় জড়িত ছিল বলে স্বীকার করে। হত্যার প্রধান আসামী ও মূলহোতা জাঙ্গালিয়া গ্রামের মৃত আজগর আলীর পুত্র আবুল কালাম(৪৩) বলে জানায়।

জানা যায়, আবুল কালাম ও কাচামালের ব্যবসা করতো। সেই সুবাধে অনেক কাচামালের পাইকাড়রা দুর দুরান্ত হতে আসতো। জান-মাল-টাকা-পয়সা হেফাজত করতে আবুল কালাম ইচ্ছা করেই ওই সমস্ত পাইকাড়দের তার বাড়ি জাংগালিয়াতে জায়গা দিত। তার বউয়ের সাথে ফস্টিনস্টি করার ফাদ পেতে দোষ চাপিয়ে পাইকাড়দের সকল টাকা আত্নসাত করত। ঘাটাইলের কাচামাল ব্যবসায়ী কাজিকে তার ফাদে ফেলে ইতিপূর্বে তার লাখ খানেক টাকা হাতিয়ে নেয়। কাদের হত্যার তিন মাস আগে ঢাকা কারওয়ান বাজারের কাচামাল ব্যবসায়ী রবিউলকে তার বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে বউকে দিয়ে ফাদে ফেলে তিন লাখ তেপান্ন হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব ঘটনাগুলো ক্রমে ক্রমে প্রকাশ পায়।

রবিউলের এ ঘটনাটি কাদের ঢাকা কারোয়ান বাজারে কাচামাল বিক্রি করতে গেলে তাকে পায়ে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে অভিযোগ জানায় কালামের বিরুদ্ধে। তার আত্নসাতকৃত টাকা রবিউলকে কালামের কাছ থেকে উদ্ধার করতে আবেদন জানায়। ঢাকা থেকে ফিরেই কাদের বেপরোয়া কালামকে বিষয়টি জিঙ্গাসা করে তাকে টাকা ফেরত দেয়ার জোর সুপারিশ করে। এতেই প্রতিবাদী কাদেরেরকাল হয়ে দাড়ায় খুনি কালাম। ঘটনার জের ধরে যাতে বিষয়টি ফাস না হয় এ লক্ষ্যে তাকে হত্যার পরিকল্পনা আটে বেপরোয়া কালাম।

মামলা সূত্রে জানা যায়, পাচ হাজার টাকার লোভ দেখিয়েগণিকে দিয়ে কাদেরকে তার শেখানো স্থানে নিয়ে যায় আবুল কালাম।আর তাদের হত্যাকান্ড ঘটায়।হত্যাকান্ডের শিকার কাদেরের বিধবা স্ত্রী, দুই সন্তান ও তার বৃদ্ধা মা অসহায় জীবন যাপন করছে। তার মা এক হাতে মৃত সন্তানের ছবি আরেক হাতে দেশনেত্রীর ছবি নিয়ে পুত্র হত্যার বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।এ হত্যা মামলার আই, ও ফেরদৌস হোসেন আসামী পক্ষের ব্যক্তিদের সাথে
সুবিধা আদায়ের ধাক্কায় ব্যস্ত রয়েছে বলে খুনি আবুল কালাম গ্রেফতার হচ্ছে না এমনটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানায়।

সূত্র:http://chalonbileralo.com/

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.