যানজটের শহর বগুড়া

0

সেলিম রেজা স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া ঃ

যানজটে স্থবির বগুড়া শহর। শহরের রাস্তাঘাটের ধারণ ক্ষমতার ১০ গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া যত্রতত্র রিক্সা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা স্ট্যান্ড এবং স্কুল কলেজের বাস শহরের মূল সড়কগুলোতে অবাধে যাতায়াত করায় যানজট অসহনীয় পর্যায়ে ঠেকেছে। সেই সঙ্গে বগুড়া শহরের ভেতর দিয়ে রেলপথ যাওয়ায় ও দিনে ১৬টি ট্রেন যাতায়াত করায় অনেকটা সময় সিগনালে কেটে যায়। সকাল থেকে বগুড়ার বিভিন্ন স্কুলের কলেজের শতাধিক বাস যাতায়াত করে শহরের প্রায় সব রাস্তায় প্রবেশ করে। শহরের সাতমাথা থেকে দত্তবাড়ি-কালিতলা পর্যন্ত এ রাস্তায় রিক্সার প্রচ- চাপ থাকে। সেই চাপের সঙ্গে যোগ হয় এসব বাস। একবার বাস এ রাস্তায় ঢুকলে পাঁচ মিনিটের রাস্তা পার হতে ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে। এদিকে শহরের ব্যস্ততম রাস্তাগুলোতে দিনের বেলা ট্রাকে পণ্য লোড-আনলোড আর সারি সারি অবৈধ অটোরিক্সা, সিএনজি এবং যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং যানজটের অন্যতম কারণ। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাকে লোক দেখানো যানজটমুক্ত করা হলেও সারা শহরজুড়ে বিরাজ করছে তীব্র যানজট। দিনের বেলায় শহরে ঢুকে পড়ছে ট্রাক। সিএনজিচালিত অটোরিক্সা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাও চলছে আগের মতোই। ফলে প্রতিদিনই যানজটের তীব্রতা বাড়ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বগুড়াবাসীকে। শহরে যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। রাত ৮টার আগে শহরে ট্রাকসহ কোনো ভারী যানবাহন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও বগুড়া শহরের ভেতর দিয়ে ঢাকা-বগুড়া-রংপুরের দূরপাল্লার কিছু কোচ অনায়াসেই যাতাযাত করে। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তার মোড়গুলোতে দাঁড়িয়ে থাকলেও ঠেকানো যাচ্ছে না এ কোচগুলো।

বিশেষ করে নামাজগড়, বড়গোলা টিনপট্টি, দত্তবাড়ী, স্টেশন রোড, চেলোপাড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সারা দিন এসব ট্রাক চলাচল করছে। দিনের বেলায় এসব ট্রাক শহরে প্রবেশ করার ফলে সারাক্ষণ যানজট লেগেই থাকছে। সাতমাথার নিকটবর্তী রেলগেট, কাঁঠালতলা, ফতেহ আলী মোড়, সাঁতানী মোড়, জলেশ্বরীতলা কালীবাড়ী মোড়, গোহাইল রোড, পার্ক রোড, খান্দার মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সারাক্ষণ যানজট লেগেই আছে। এছাড়া সড়কে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণেও যানজট বাড়ছে। ব্যস্ততম কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, জলেশ্বরীতলা শহীদ আবদুল জব্বার সড়ক, জজকোর্ট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তার দু’পাশে গাড়ি অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করায় যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সদর থানার সামনেই কবি নজরুল ইসলাম সড়কের দু’পাশে দিনভর অসংখ্য গাড়ি অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখলেও পুলিশ নীরবতা পালন করে। বগুড়া শহরে যানজটের মূল কারণ অবৈধ রিক্সা, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা। যার সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। অথচ এ শহরে পাঁচ হাজার রিক্সা চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বগুড়া পৌরসভা। বাকি ৩০ হাজার যানবাহনের নেই কোনো বৈধতা। শহরের রাস্তাঘাট অনুযায়ী ১০ গুণ বেশি যানবাহন চলাচল করে থাকে। বগুড়া পৌরসভার তথ্যমতে, তাদের কাছে নিবন্ধিত সাড়ে পাঁচ হাজার রিক্সার বাইরে চলাচল করে আরও ২০ হাজার রিক্সা । বগুড়া বিআরটিএ’র কাছে নিবন্ধন রয়েছে পাঁচ হাজার সিএনজি অটোরিক্সার। সেখানে সড়কে চলছে শহর ও শহরের বাইরে মিলে ২০ হাজারেরও বেশি সিএনজি অটোরিক্সা । পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঁঞা মাঝে মধ্যে যানজট নিরসনে নিজেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান। তিনি যতক্ষণ রাস্তায় থাকেন ততক্ষণ গাড়ি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারপর আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যায় শহর।

পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঁঞা জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, সিএনজি, ভটভটির মতো অবৈধ যানবাহন ধরতে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলছে। যানজট নিরসনে তিনি পৌরসভার সহযোগিতার পাশাপশি চালকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া সবাই ট্রাফিক আইন মেনে রাস্তায় চলাচল করলে যানজট থাকবে না বলেও জানান তিনি।

Leave A Reply