তালতলীর টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হুমকির মুখে

0

মো.মিজানুর রহমান নাদিম,বরগুনা প্রতিনিধি :

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত বরগুনা তালতলীর টেংরাগিরি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল হুমকির মুখে পড়ছে।বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় এই বনটি অবস্থিত বরগুনা তালতলীর নলবুনিয়া সোনারচর ইকোপার্কের কাছাকাছি ।এবং সাগরে প্রায় দুই হাজার একর জমি ভেঙ্গে গেছে। প্রায় দশলাখ গাছ তলিয়ে গেছে।গাছের গোড়ায় বালু জমে ও ভাঙনের কবলে বিলীন হচ্ছে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বনের জীববৈচিত্র্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নলবুনিয়া, নিশানবাড়িয়া, আশারচর ও নিদ্রা-সখিনা এলাকায় মড়ক ও নিধন দুটিই রয়েছে। দূর থেকে ঘন বন মনে হলেও চোরাকারবারিদের কবলে পড়ে ফাঁকা হয়ে গেছে ভেতরটা। কয়েক কিলোমিটার এলাকার বনের গাছ সম্পূর্ণ উজাড় হয়ে গেছে। আরো অসংখ্য গাছের বাকল ও ডালপালা ছেঁটে ফেলায় সেসব গাছ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নিদ্রা ও আশারচর এলাকায় কয়েক হাজার গাছ কেটে সাবাড় করার পর পড়ে আছে সেসব গাছের গোড়া। এসব গাছ মরার অন্যতম কারণ গোড়ায় বালু জমে যাওয়া।গাছ গুলোর পাতা হলদে এবং বিভিন্ন রকমের হয়ে গেছে।

পরিবেশ আন্দোলনের বরগুনা জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক বলেন,একদিকে  সাগরের টেউর কারনে ভেঙ্গে যায় এবং আরেক দিক বন দুস্যরা গাছ কেটে এজন্য বনাঞ্চল খুব হুমকির মুখে পড়ে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভাঙর রোধে কোনো বরাদ্ধ নেই।জনবল সংকটে গাছ কাটা থামানে যায় না।টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রিট কর্মকর্তা জাহিদ হাচান বলেন,বন রক্ষনাবেক্ষনার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।তিনি আরো বলেন,এ বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা টেংরাগিরি এক সময় সুন্দরবনের অংশ ছিল। ১৯২৭ সালের বন আইনের জরিপ অনুযায়ী, ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার এটিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করে। পরে ১৯৬৭ সালে এটিকে টেংরাগিরি বনাঞ্চল হিসেবে নামকরণ করা হয়। এ বনের মধ্যে গাছের রয়েছে গেওয়া, জাম, ধুন্দল, কেওড়া, সুন্দরী, বাইন, করমচা, বলই কেওয়া, তাল, কাঁকড়া, বনকাঁঠাল, রেইনট্রি, হেতাল, তাম্বুলকাটা ও গরান। আর বনে বাস করছে হাজার প্রজাতির প্রাণী। এদের মধ্যে রয়েছে কাঠবিড়ালি, বানর, প্রায় ৪০ প্রজাতির সাপ, সজারু, শূকর, কচ্ছপ, শেয়াল, ডোরাকাটা বাঘ, বনমোরগ, মধু কাঁকড়া ইত্যাদি।উপকুলীয় এলাকার সংরক্ষিত বন রক্ষা কমিটির সভাপতি হাচান ঝন্টু বলেন বন বিভাগের কিছু অসাধু  কর্মকর্তা আছেন তারা বন দুস্যদের কাছে বনের গাছ বিক্রি করে দেয়।

বরগুনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিঞ্জানের  প্রধান শাহ আলম বলেন, সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার সমুদ্রের পানির সঙ্গে পলিমাটি যুক্ত জোয়ারের পানি বনের মধ্যে প্রবেশ করে।এ জন্য ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের শ্বাসমুল দীর্ঘ সময় ঢেকে থাকার কারনে গাছ গুলো মরে য়ায়।এগুলো সংরক্ষন না করতে পারলে বনের ঐতিহ্য হাড়িয়ে ফেলবে।

বরগুনা সদরের রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন,প্রাকৃতিক কারনে যেখানে বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে সে স্থানে শেল্টার বেল্ট স্বরুপ চরে বনায়ন করছি।আমাদের লোকবল কমের কারনে বন রক্ষায় হিমসিম খাচ্ছি।

Leave A Reply