ঘাটাইলে বোর্ড বইয়ের বাইরে অবৈধ বইয়ের বানিজ্য

0

ঘাটাইল  ( টাংগাইল) প্রতিনিধি

টাংগাইল জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন বছরের নতুন শ্রেণিতে ওঠা আর নতুন বইয়ের উৎসব সব কিছু ম্লান করে দিচ্ছে কতিপয় গাইড বই কোম্পানী আর জেলার কিছু শিক্ষক নামের ব্যবসায়িরা।

নতুন বছরের শুরুতে নতুন বই সরবরাহ করার সঙ্গে সঙ্গে লিখে দেওয়া হচ্ছে এই বই পড়ার জন্য সহায়ক হিসাবে এই গাইড অবশ্যই কিনতে হবে। গাইড বই না কিনলে তারা পড়া বুঝতে পারবে না এমনকি অকৃতকার্য হওয়ার ভয় পর্যন্ত দেখানো হচ্ছে।

কোটি টাকার মিশন নিয়ে বিভিন œবই কোম্পানির প্রতিনিধিরা ২০১৯ শিক্ষা বর্ষের ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেও পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি নোট-গাইড ও ব্যাকরনসহ অন্যান্য বই শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য বলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা  মোটা অংকের অর্থেও বিনিময়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এ সব নোটবই, গাইড ও কোম্পানির তৈরী করা সিলেবাস কিনতে বলেন।

যে সব পুস্তক প্রকাশনা কোম্পানী গুলো চষে বেড়াচ্ছে মিশন সফল করতে তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য প্রগতি, অনুপম, লেকচার, আদিল, পাঞ্জেরী, এ্যাডভান্স, নবদূত, ইন্টারনেট, পপিসহ আরো কয়েকটি পুস্তক প্রকাশনা কোম্পানী তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় এজেন্ট ডিলার সেট আপসহ মাঠ পর্যায়ে চষে বেড়াচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বই কোম্পানীর প্রতিনিধি বলেন, আমরা কোম্পানীর গাইড চালানোর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষদেও বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে থাকি যেমন আলমারি, টেলিভিশন, কেবিনেট। তারা অনেক সময় এগুলো না নিয়ে নগদ অর্থ ও নিয়ে থাকেন। এসব নোটবই, গাইড বই কিনতে হচ্ছে সেট ভিত্তিক, যদি ইংরেজীর একটা গাইড দরকার হয়, শুধু মাত্র ইংরেজী গাইড বইটা দিবেনা, কিনতে হবে সেট ভিত্তিক।

এ ব্যাপারে বইয়ের দোকানীরা বলেন, কোম্পানী এই নিয়ম করেছে, আমরা কি করবো? দরকার একটি বই অথচ কিনতে হবে সেটসহ।

দেশের  শিক্ষাঙ্গনে  অনিয়মের নৈরাজ্য চলছে । সরকার  শিক্ষাঙ্গনে  শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য  আন্তরিক হলে ও  বিভিন্ন  নামীদামী  প্রকাশক ও  স্বার্থান্বেষী  শিক্ষক  নেতাদের  যোগসাজশে  শিক্ষার্থী দের  উপর  চাপিয়ে দেয়া  হয়েছে  অবৈধ  বই।  এতে  শিক্ষার্থী  বাড়তি  বইয়ের  চাপে  হিমশিম  খেতে  হচ্ছে ।  অভিভাবকরা  উচ্চ  মূল্যের  বাড়তি বই  কিনতে  অতিরিক্ত টাকা  ব্যয়  করতে  বাধ্য  হচ্ছে ।

সরকার  শিক্ষার্থীদের  নোট  ও  গাইড বই  নিষেধ  করেছে ।  উচ্চ  আদালত  সকল  ধরনের  কোচিং  বানিজ্য  অবৈধ  ঘোষণা  করেছে ,  তারপরও  চলছে  বাড়তি  বইয়ের  রমরমা  বানিজ্য ।  নামীদামী  প্রকাশক ও  শিক্ষক  নেতারা  অবৈধ  বানিজ্য  করে  কোটি কোটি টাকা  কামিয়ে  নিচ্ছে ।  টাংগাইল  জেলার  সব কটি  উপজেলায়  এই  অনিয়ম  অবাধে  চলছে ।
পরিসংখ্যানে  দেখা  যায়,  ঘাটাইল উপজেলায়  ২০১৯  খৃষ্টাব্দে  বোর্ড  প্রবর্তিত  বইয়ের  মধ্যে  মাধ্যমিক  বিদ্যালয়ে  চাহিদা  ছিল  ৪ লাখ ৫৮ হাজার  একশ  পনের , এবতেদায়ী  মাদ্রাসায়  ৫১  হাজার  নয়শ বিশ , দাখিল  শাখায়   ১  লক্ষ  ৩৪ হাজার   একশত  সাতাশি ,   সর্ব মোট  ৬, ১৪,২০২।  শিক্ষাবোর্ড  বিনামূল্যে  বইগুলো  শতভাগ  বিতরণ  সম্পন্ন  করেছে । এর  বাইরে  বিভিন্ন  প্রকাশক  ও  শিক্ষক  নেতাদের  যোগসাজশে  ৬ ষষ্ঠ  থেকে  নবম  শ্রেণী  পর্যন্ত  তিনটি  করে  বই  বাধ্যতামুলক  করেছে  ।  শিক্ষার্থী দেরকে   এ সব  বই নোট / গাইড   মিলিয়ে  উচ্চ  মূল্যে  কিনতে  হয় ।  লাইব্রেরী গুলো  এ সকল  বইয়ের  জন্য  কোন  রশিদ  দেয়  না ।  এর  বিনিময়ে  শিক্ষকদের  মুনাফা লোভী  সিন্ডিকেটের  সদস্যরা  পেয়ে  থাকে  উচ্চ  মূল্য  কমিশনের  কোটি কোটি  টাকা ।  ঘাটাইল উপজেলায় এ  সিন্ডিকেটের  সদস্য  সতের  জন ।
আবার  ভিন্ন  উপজেলায়  বারতি  বই ও  ভিন্ন  ভিন্ন , আর এই  অবৈধ  বানিজ্য  চলে  আসছে  বছরের পর  বছর  ধরে ।
এ ব্যপারে  ঘাটাইল উপজেলার  বিভিন্ন  শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের  কয়েক জন  অভিভাবক  ক্ষোভ  প্রকাশ  করে  বলেন, বোর্ড  বহির্ভূত  বই , নোট,  গাইড   শুধু  উচ্চ  মূল্যেই  কিনতে  হয়না,  শিক্ষার্থী দের  উপর   অন্যূায়  চাপ  সৃষ্টি  করছে  যাহা  অ নৈতিক ।  নাম  প্রকাশ  না  করার  শর্তে  কিছু  শিক্ষক  বিষয়টি অনৈতিক  বলেছেন ।  ঘাটাইল উপজেলা  মাধ্যমিক  শিক্ষা  কর্মকর্তা  এ কে এম  শামসুল  হক , ঘটনার  সত্যতা  স্বীকার  করে  বলেন,  আমি  অবৈধ  বই  বানিজ্য  বন্ধে  একমত ।  এ  জন্যে   সরকারের  পাশাপাশি,  শিক্ষক,  অভিভাবক দেরও  সচেতন  হওয়া  দরকার ।
Leave A Reply